রমা একাদশীর মাহাত্ম্য।।রমা একাদশী

0
460

একসময় যুধিষ্ঠির মহারাজ শ্রীকৃষ্ণ কে বললেন—হে জনার্দন! কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম কি এবং তার মহিমা কি তা কৃপা করে আমাকে বলুন।

শ্রীকৃষ্ণবললেন–হে রাজন! মহাপাপ বিনষ্টকারী এই একাদশী ‘রমা’ নামে বিখ্যাত। আমি এখন সেই মাহাত্ম্য বর্ণনা করছি, আপনি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করুন।

পুরাকালেমুচুকুন্দ নামে এক সুপ্রসিদ্ধ রাজা ছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র, যম, বরুন ও ধনপতি কুবেরের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল। ভক্ত শ্রেষ্ঠ বিভীষণের সাথেও তার অত্যন্ত সদ্ভাব ছিল। তিনি ছিলেন বিষ্ণু ভক্ত ও সত্যপ্রতিজ্ঞ।

এই রূপে তিনি ধর্ম অনুযায়ী রাজ্য শাসন করতেন l চন্দ্রভাগা নামে তার একটি কন্যা ছিল। চন্দসেনের পুত্র শোভনের সাথে তার বিবাহ হয়েছিল। শোভন এক সময় তার শ্বশুর বাড়িতে এসেছিল। দৈবক্রমে সেই দিন ছিল একাদশী তিথি। স্বামীকে দেখে পতি পরায়না চন্দ্রভাগা মনে মনে চিন্তা করতে লাগল—হে ভগবান! আমার স্বামী অত্যন্ত দুর্বল। তিনি ক্ষুধা সহ্য করতে পারেন না।

এখানে আমার পিতার শাসন খুবই কঠোর। দশমীর দিন তিনি নাগরা বাজিয়ে ঘোষণা করে দিয়েছেন যে একাদশীতে আহার নিষিদ্ধ। আমি এখন কি করি!

রাজারনিষেধাজ্ঞা শুনে শোভন তার প্রিয়তমা পত্নীকে বলল—হে প্রিয়ে, এখন আমার কি কর্তব্য তা আমাকে বলো। উত্তরে রাজকন্যা বলল—হে স্বামী! আজ এই গৃহে এমনকি রাজ্য মধ্যে কেউই আহার করবে না। মানুষের কথা তো দূরে থাকুক, পশুরা পর্যন্ত অন্ন জল মাত্র গ্রহণ করবে না।

হে নাথ! যদি তুমি এ থেকে পরিত্রাণ চাও তবে নিজগৃহে প্রত্যাবর্তন করো। এখানে আহার করলে তুমি সকলের নিন্দা ভাজন হবে এবং আমার পিতাও ক্রুদ্ধ হবেন। এখন বিশেষ ভাবে বিচার করে যা ভালো হয়, তুমি তা ই করো। সাধ্বী স্ত্রীর এই কথা শুনে শোভন বলল—হে প্রিয়ে! তুমি ঠিক বলেছ। কিন্তু আমি গৃহে ফিরে যাব না। এখানে থেকে একাদশী ব্রত পালন করব। ভাগ্যে যা লেখা আছে তা অবশ্যই ঘটবে। এইভাবে শোভন ব্রত পালনে বদ্ধপরিকর হলেন। সমস্তদিন অতিক্রান্ত হয়ে রাত্রি শুরু হল।

বৈষ্ণব দের কাছে এই রাত্রি সত্যি ই আনন্দকর। কিন্তু শোভনের পক্ষে তা ছিল বড়ই দুঃখদায়ক। কেননা ক্ষুধা তৃষ্ণায় সে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ল। এই ভাবে রাত্রি অতিবাহিত হলে সূর্যোদয় কালে তার মৃত্যু হল। রাজা মুচুকুন্দ সাড়ম্বরে তার শবদাহ কার্য সুসম্পন্ন করলেন। চন্দ্রভাগা স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সমাপ্ত করে পিতার আদেশে পিতৃগৃহেই বাস লাগল।

কালক্রমেরমা ব্রত প্রভাবে শোভন মন্দরাচল শিখরে অনুপম সৌন্দর্যবিশিষ্ট এক রমনীয় দেবপুরী প্রাপ্ত হলেন। এক সময় মুচুকুন্দ পুরের সোমশর্ম্মা নামে এক ব্রাহ্মণ তীর্থভ্রমন করতে করতে সেখানে উপস্থিত হলেন।সেখানে রত্নমন্ডিত বিচিত্র স্ফটিক খচিত সিংহাসনে রত্নালংকারে ভূষিত রাজা শোভনকে তিনি দেখতে পেলেন। গন্ধর্ব ও অপ্সরাগণ দ্বারা নানা উপচারে সেখানে পূজিত হচ্ছিলেন।

রাজা মুচুকুন্দের জামাতা রূপে ব্রাহ্মণ তাকে চিনতে পেরে তার কাছে গেলেন। শোভন সেই ব্রাহ্মণকে দেখে আসন থেকে উঠে এসে তার চরণ বন্দনা করলেন। শ্বশুর মুচুকুন্দ ও স্ত্রী চন্দ্রভাগা সহ নগরবাসী সকলের কুশলবার্তা জিজ্ঞাসা করলেন। ব্রাহ্মণ সকলের কুশল সংবাদ জানালেন। জিজ্ঞাসা করলেন—এমন বিচিত্র মনোরম স্থান কেউ কখনও দেখেনি। আপনি কিভাবে এই স্থান প্রাপ্ত হলেন, তা সবিস্তারে আমার কাছে বর্ণনা করুন।

শোভন বললেন যে, কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া রমা একাদশী সর্ব ব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আমি তা শ্রদ্ধা রহিত ভাবে পালন করলেও তার আশ্চর্যজনক এই ফল লাভ করেছি। আপনি কৃপা করে চন্দ্রভাগাকে সমস্ত ঘটনা জানাবেন।

সোমশর্ম্মামুচুকুন্দ পুরে ফিরে এসে চন্দ্রভাগার কাছে সমস্ত ঘটনার কথা জানালেন। ব্রাহ্মণের কথা শুনে অত্যন্ত আনন্দিত চন্দ্রভাগা বললেন—হে ব্রাহ্মণ! আপনার কথা আমার কাছে স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে।

তখন সোমশর্ম্মা বললেন—হে পুত্রী, সেখানে তোমার স্বামীকে আমি স্বয়ং স্বচক্ষে দেখেছি। অগ্নিদেবের মতো দীপ্তিমান তার নগরও দর্শন করেছি। কিন্তু তার নগর স্থির নয়, তা যাতে স্থির হয়, সেই মতো কোনো উপায় কর। এসব কথা শুনে চন্দ্রভাগা বললেন, তাকে দেখতে আমার একান্ত ইচ্ছা হচ্ছে। আমাকে এখনি তার কাছে নিয়ে চলুন। আমি ব্রত পালনের পুণ্য প্রভাবে নগর স্থির করে দেব।

তখনসোমশর্ম্মা চন্দ্রভাগাকে নিয়ে মন্দার পর্বতে বামনদেবের আশ্রমে উপস্থিত হলেন। সেখানে ঋষির কৃপায় ও হরিবাসর ব্রত পালনের ফলে চন্দ্রভাগা দিব্য শরীর প্রাপ্ত হল। দিব্য গতি লাভ করে স্বামীর নিকট উপস্থিত হলেন। প্রিয় পত্নীকে দেখে শোভন অতীব আনন্দিত হলেন।

বহুদিন পর স্বামীর সঙ্গ লাভ করে চন্দ্রভাগা অকপটে নিজের পুণ্য কথা জানালেন। হে প্রিয়, আজ থেকে আট বছর আগে আমি যখন পিতৃগৃহে ছিলাম তখন থেকে রমা একাদশীর ব্রত নিষ্ঠা সহকারে পালন করতাম। ঐ পুণ্য প্রভাবে এই নগর স্থির হবে এবং মহাপ্রলয় পর্যন্ত থাকবে।

হেমহারাজ! মন্দরাচল পর্বতের শিখরে শোভন তার স্ত্রী চন্দ্রভাগা সহ দিব্যসুখ ভোগ করতে লাগলেন। পাপনাশিনী ও ভুক্তি মুক্তি প্রদায়িনী রমা একাদশীর মাহাত্ম্য আপনার কাছে বর্ণনা করলাম। যিনি এই একাদশী ব্রত শ্রবণ করবেন, তিনি সর্বপাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে পূজিত হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে