যিশু পূজা।। মন্দিরে যিশু পূজা অযৌক্তিক

0
205

মন্দিরে যিশুপূজা, অশাস্ত্রীয় ও অযৌক্তিক

বাঙালি হিন্দুর বারো মাসে তেরো পার্বণের সাথে আরেকটি পার্বণ হল বড়দিন বা যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন। যিশুখ্রিস্ট খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক। একজন মহাপুরুষ হিসেবে আমরা বড়দিনে যিশুকে স্মরণ করতে পারি। অথবা বড়দিনে গির্জায় গিয়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রোগামে অংশগ্রহণও করতে পারি; কিন্তু মন্দিরে সংস্কৃত স্তোস্ত্রগীত, পূজামন্ত্র তৈরি করে যিশুখ্রিস্টের পূজা যথাযথ নয়। যেহেতু যিশুখ্রিস্টকে হিন্দু সম্প্রদায়ের অবতার সাজিয়ে পূজা করাটা খ্রিস্টধর্মও সমর্থন করে না। যিশুখ্রিস্টের পূজার প্রসাদ বলে নিবেদন করা হয়েছে কেক, বিস্কুট,চকলেট, চানাচুর, স্যান্ডউইচ, বার্গার কোল্ডড্রিঙ্কস ইত্যাদি। দেবতাদের মত ষোড়শ উপচারে যিশু খ্রিস্টের পূজা করতে যিশুর ধ্যানমন্ত্র তৈরি করেছে, রামকৃষ্ণ মঠ । বিষয়টি দুঃখজনক এবং সম্পূর্ণভাবে অশাস্ত্রীয়। রামকৃষ্ণ মঠের নব্য তৈরি করা যিশুখ্রিস্টের পূজায় ব্যবহৃত সংস্কৃত ধ্যানমন্ত্র হল:

“ওঁ মধুরসরলবাক্যৈ-রীশতত্ত্বং প্রকাশ্য,
ক্রশগতপরিশেষঃ অপীশপুত্রঃ অমৃত যঃ।
তমতিশয় পবিত্রং মেরিজং লোকবন্ধুম্,
বিমলপরমহংসং রামকৃষ্ণং ভজামঃ।।”
(স্বামী অমৃতত্বানন্দ ২০১৮: ১০৫)

ষোড়শ উপচারে রামকৃষ্ণ মঠে যিশুখ্রিস্ট পূজার বীজমন্ত্র হল,”ওঁ যিশবে নমঃ”।আমি ঠিক জানিনা, যিশুখ্রিস্ট কি নিজে আদৌ জানেন; তাঁর মৃত্যুর প্রায় দুইসহস্র পরে তাঁকে ষোড়শউপচারে পূজা করার জন্যে সংস্কৃত ধ্যানমন্ত্র, বীজমন্ত্র এবং পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র তৈরি করেছে ভারতের কিছু অহেতুক সর্বধর্ম সমন্বয়কারী গ্রুপ। এটা সত্য যে বর্তমান বিশ্বে কেউ একা একা বাস করতে পারবে না।প্রযুক্তির কল্যাণে সকলেই সকলের কাছাকাছি এসে গেছে। আজ চাইলেই নিজের ধর্মের সহ অন্যান্য ধর্ম এবং ধর্মাবলম্বী সম্পর্কে জানা যায়। এ জানাটা প্রয়োজনীয়। কেউ কোন ধর্ম বা ধর্মাবলম্বী সম্পর্কে বিদ্বেষভাব থাকা উচিত নয়। কিন্তু সর্বধর্ম সমন্বয়ের নামে অহেতুক, অশাস্ত্রীয় কিছু করা উচিত নয়। যিশুখ্রিস্টকে সম্মান জানাতে তাঁকে হিন্দু শাস্ত্রীয়রীতিতে পূজা না করে আমরা তাঁকে মহাপুরুষ হিসেবে সম্মান জানাতে পারি। কিন্তু আমি বিস্মিত হালের সমন্বয়কারীদের কাণ্ডে। অনেক খ্রিস্টান পাদ্রীদের সাথে কথা বলে দেখেছি, তারা যিশুখ্রিস্টকে এভাবে মন্দিরে পূজা করার বিষয়ে অসন্তুষ্ট। তারা অধিকাংশই রামকৃষ্ণ মঠে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত এ যিশুপূজা সম্পর্কে কিছুই জানেন না; যারা কিছুটা জানেন তারা যিশুখ্রিস্টকে পূজা করাকে তাদের খ্রিস্টধর্মবিরুদ্ধ বলেই মনে করে। এ যিশুপূজা হিন্দুধর্মে অশাস্ত্রীয়, খ্রিস্টানদের ধর্মেও এটি ধর্মবিরুদ্ধ ; তাহলে কেন শুধুশুধু এই হুকোমুখো হেংলামি করতে হবে? সর্বধর্ম সমন্বয়ের নামে এই অপ্রয়োজনীয় আপত্তিকর কর্মকাণ্ড একমাত্র শুধু হিন্দু সাধু-সন্তদেরই করতে দেখা যায়। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের এ নিয়ে খুব একটা চিন্তা-ভাবনাই নেই বলা যায়।

বড়দিন উপলক্ষে মন্দিরে যারা যিশুপূজা করছেন, তাদের কাছে আমার অনুরোধ। হে সাধুসন্ত! আপনারা কি মূর্তিপূজা বা মূর্তিপূজকদের সম্পর্কে বাইবেলের অভিমত পড়ে দেখেছেন? আমি তাদের কোন দোষ দেখি না। তাদের ধর্মীয় নির্দেশনা তাদের ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে। তাই মন্দিরে যিশুপূজা যারা করছেন, এই দেবদেবীর মন্দির এবং মূর্তিপূজা সম্পর্কে বাইবেলের কি অভিমত? বিষয়টি আমিও আগে জানতাম না। কিন্তু ভাল করে পড়তে যেয়ে বাইবেলের বেশকয়েকটি স্থানেই চোখ আটকে যায় আমার। আমি বিস্মিত হয়ে যাই, বাইবেলে দেবদেবীদের মূর্তিগুলি ভাঙার সরাসরি নির্দেশ দেখে।

“তোমরা তাদের দেবতাদের পূজা কিংবা সেবা করবে না এবং সেখানকার লোকেরা যা করে তা করবে না। তোমরা তাদের দেবদেবতার মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলবে এবং তাদের পূজার পাথরগুলোও টুকরো টুকরো করে ফেলবে।”
(পবিত্র বাইবেল: যাত্রাপুস্তক, ২৩. ২৪)

“সদাপ্রভুকে ছাড়া যদি কেউ কোন দেবতার কাছে কিছু উৎসর্গ করে তবে তাকেও মেরে ফেলতে হবে।”
(পবিত্র বাইবেল:যাত্রাপুস্তক,২২.২০)

তোমরা তাদের বেদীগুলো ভেঙ্গে ফেলবে,তাদের পূজার পাথরগুলো টুকরো টুকরো করে ফেলবে আর তাদের পূজার আশেরা-খুঁটিগুলো কেটে ফেলবে। তোমরা কোন দেবতার উপাসনা করবে না।
(পবিত্র বাইবেল:যাত্রাপুস্তক,৩৪.১৩-১৪)

“আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে এসেছি এই কথা মনে করো না। আমি শান্তি দিতে আসিনি বরং মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি; ছেলেকে বাবার বিরুদ্ধে,মেয়েকে মায়ের বিরুদ্ধে, বৌকে শাশুড়ির বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি। একজন মানুষের নিজের পরিবারের লোকেরাই তার শত্রু হবে।”
(পবিত্র বাইবেল : মথি, ১০.৩৪-৩৬)

আমি পৃথিবীতে আগুন জ্বালাতে এসেছি; যদি তা আগেই জ্বলে উঠতো তবে কতই না ভাল হতো!

তোমাদের কি মনে হয় যে, আমি শান্তি দিতে এসেছি? না তা নয়। আমি শান্তি দিতে আসিনি বরং মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি। এখন থেকে এক বাড়ির পাঁচজন পাঁচভাগ হয়ে যাবে, তিনজন দুইজনের বিরুদ্ধে আর দুইজন তিনজনের বিরুদ্ধে।
(পবিত্র বাইবেল : লূক, ১২. ৪৯,৫১-৫২)

তোমরা ছেলেদের এবং যারা কুমারী নয়, এমন সব স্ত্রীলোকদের মেরে ফেলো; কিন্তু যারা কুমারী তাদের তোমরা নিজেদের জন্যে বাঁচিয়ে রাখো।
(পবিত্র বাইবেল :গণনা পুস্তক, ৩১. ১৭-১৮)

তিনি যখন তাদের তোমাদের হাতের মুঠোয় এনে দেবেন এবং তোমরা তাদের হারিয়ে দেবে তখন তোমরা একেবারে ধ্বংস করে ফেলবে।তোমরা তাদের সঙ্গে কোন সন্ধি করবে না এবং তাদের প্রতি কোন দয়া দেখাবে না। তোমরা তাদের সঙ্গে কোন বিয়ের সম্বন্ধ স্থাপন করবে না। তোমাদের মেয়েদেরও তোমরা তাদের ছেলেদের হাতে দিবে না এবং তাদের মেয়েদেরও তোমাদের ছেলেদের জন্য আনবে না। কারণ সেই মেয়েরা তোমাদের ছেলেদের আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেবে এবং দেব-দেবতার পূজা করাবে। তাতে সদাপ্রভুর ক্রোধের আগুন তোমাদের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠবে এবং সঙ্গে সঙ্গে তোমাদের ধ্বংস করে ফেলবে।
তোমরা ঐ সব জাতির বেদীগুলো ভেঙ্গে ফেলবে, পূজার পাথরগুলো চুরমার করে দেবে, পূজার আশেরা-খুঁটিগুলো কেটে ফেলবে এবং মূর্তিগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেবে।
( পবিত্র বাইবেল:দ্বিতীয় বিবরণ, ০৭.২-৫)

তাদের দেব-দেবতার মূর্তিগুলো তোমরা আগুনে পুড়িয়ে ফেলবে।তোমরা তাদের গায়ের সোনা-রূপার লোভ করবে না নিজেদের জন্য তোমরা তা নেবে না, কারণ তা করলে তোমরা ওগুলোর ফাঁদে পড়বে।তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে ওগুলো ঘৃণার জিনিষ।
( পবিত্র বাইবেল:দ্বিতীয় বিবরণ, ০৭.২৬)

সে হয়তো আমার আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে দেব-দেবতা কিম্বা সূর্য, চাঁদ বা আকাশের তারাগুলোর পূজা করছে।
( পবিত্র বাইবেল:দ্বিতীয় বিবরণ, ১৭.০৩)

যে যিশু খ্রিস্ট বলেছেন, আমি শান্তি দিতে আসিনি বরং মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি , অথচ আমাদের ধর্মসভাতেই বলা হয়, যিশু খ্রিস্ট হিন্দুধর্মের অবতার, সে শান্তির, প্রেমের এবং করুণার অবতার। তাই আমি সাধু-সন্তদের বলছি, গদিবালিশে সুয়ে-বসে অহেতুক সর্বধর্ম সমন্বয়ের নামে মানুষকে ধূম্রজাল সৃষ্টি না করে, প্রত্যন্ত এলাকাতে গিয়ে মিশনারীদের ধর্মান্তরের হাত থেকে সাধারণ গরিব অসহায় হিন্দুদের রক্ষা করুন। গত শতবছরে এই ভূখণ্ডে খ্রিস্টান মিশনারীরা এককোটির উপরে মানুষকে ধর্মান্তরিত করেছে। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের মেঘালয়, মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ডে এ তিনটি প্রদেশের আজ প্রায় শতভাগ আদিবাসী ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান হয়েছে গত কয়েক দশকে । মাদার তেরেসা এবং তার প্রতিষ্ঠান কত মানুষকে ধর্মান্তরিত করেছে তা জানেন কি? যদি না জানেন তবে আর জানার দরকার নেই। আপনাদের উদ্দেশ্যে একটি বাঙালি প্রবাদ :

“আজ বুঝবি না, বুঝবি কাল,
কপাল চাপড়াবি, আর পারবি গাল।
যেদিন বুঝবি, নিজের হাল
সেদিন থাকবে না, পিঠের ছাল।”

যারা নিজেরা ইচ্ছামত নব-নবশাস্ত্রীয় বিধান তৈরি করে গোষ্ঠীবদ্ধভাবে অন্যদের তা পালনে বাধ্য করতে নির্দেশনা দেন; তাদের অবশ্যই মনে প্রয়োজন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীমদ্ভগবদগীতার ষোড়শ অধ্যায়ে বর্ণিত প্রাসঙ্গিক বাণীটি। সেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শাস্ত্রবিধি ত্যাগ করে স্বেচ্ছাচারী হয়ে নিজ খুশীমত আচরণ করতে তীব্রভাবে নিষেধ করেছেন এবং যুগপৎভাবে ভৎসনা করেছেন।ভগবান স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগকারী ব্যক্তিদের ইহজাগতিক সুখ যেমন হয়না ; তেমনি মৃত্যুর পরে তাদের মোক্ষলাভও হয়না। তাদের পরিণতি খুব একটা শুভকর হয় না।

যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ।
ন স সিদ্ধিম্বাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্।।
(শ্রীমদ্ভগবদগীতা: ১৬.২৩)

“যে ব্যক্তি শাস্ত্রবিধি ত্যাগ করে স্বেচ্ছাচারী হয়ে নিজ খুশীমত আচরণ করে, সে সিদ্ধিলাভ করতে পারেনা, তার সুখও থাকে না এবং সে জীবের পরমগতি মোক্ষলাভও করতে পারে না।”

বেলুড় মঠসহ শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে যিশুখ্রিস্টের পূজা প্রসঙ্গে একটি ঘটনার বয়ান দেয়া হয়। সে ঘটনাটি ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে একটি ঘটনা। নরেন্দ্রনাথ বা স্বামী বিবেকানন্দকে গুরুভ্রাতা বাবুরামের মা শ্রীমতী মাতঙ্গিনী দেবী আঁটপুর গ্রামে আমন্ত্রণ জানান। সাথে থাকে স্বামী বিবেকানন্দের আট গুরুভ্রাতা।তাঁরা সকলেই শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের দীক্ষিত শিষ্য। তাঁরা হলেন :বাবুরাম ( স্বামী প্রেমানন্দ), শরৎ (স্বামী সারদানন্দ), শশী ( স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ), তারক ( স্বামী শিবানন্দ), কালী (স্বামী অভেদানন্দ), নিরঞ্জন ( স্বামী নিরঞ্জনানন্দ), গঙ্গাধর ( স্বামী অখণ্ডানন্দ) এবং সারদা ( স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ)।তাঁরা বাবুরামের মা শ্রীমতী মাতঙ্গিনী দেবীর নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দের ১৯ শে ডিসেম্বর হরিপাল ষ্টেশন থেকে পদব্রজে আঁটপুরে যান। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে ডিসেম্বর, ১৩ই পৌষ, ১২৯৩ বঙ্গাব্দ আঁটপুরে নরেন্দ্রনাথ ও আটজন গুরুভাই আগুনের ধুনি জ্বালিয়ে সন্ন্যাস গ্রহণের সংকল্প করেন। স্বামী বিবেকানন্দ ঈশ্বরতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন। দিনটি ছিল বড়দিনের পূর্বসন্ধ্যা। সেদিন আলোচনা প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর গুরুভাইদের যীশু খ্রিস্টের জীবন ও ত্যাগের কথা বর্ণনা করেন।একপর্যায়ে নয়জন গুরুভ্রাতা উঠে দাঁড়িয়ে ধুনির অগ্নিশিখাকে সাক্ষী করে ঈশ্বরের নামে সংকল্প করলেন মানুষের কল্যাণে সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাস গ্রহণ করবেন। এ ঘটনাকে স্মরণ করে পরবর্তীতে শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন তাদের মঠে যিশু খ্রিস্টের সংস্কৃত পূজামন্ত্র তৈরি করে যিশুপূজার শুরু করে। অথচ আমরা যদি স্বামী বিবেকানন্দের জীবনের ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে ২৪ ডিসেম্বরের ঘটনাটি নির্মোহ দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ

করি, তবে দেখতে পাই সেদিন তিনি কোন যিশুপূজা করেননি। করার প্রশ্নও উঠে না। তিনি সেদিন আধ্যাত্মিক বিভিন্ন বিষয়ে গুরুভাইদের অবহিত করতে শুধু যিশু খ্রিস্টের জীবনের ত্যাগের দৃষ্টান্তটি টেনেছেন মাত্র। সেদিনের ঘটনাকে স্মরণ করে রামকৃষ্ণ মিশন ২৪ ডিসেম্বর যিশুখ্রিস্টকে স্মরণ করতে পারে। সেটা তাদের সাংগঠনিক বিষয়। কিন্তু তারা যখন তাদের সাংগঠনিক বিষয়টিকে ছাপিয়ে যিশুখ্রিস্টকে দেবতাদের মত সংস্কৃত পূজামন্ত্র তৈরি করে পূজা করছে, তখন বিষয়টি আর তাদের সাংগঠনিক বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকে না। কারণ বিষয়টি তখন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অনুভূতিতে আঘাতের প্রসঙ্গ চলে আসে। মন্দিরে যিশুপূজায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অনুভূতিতে আঘাতের প্রধান কারণ- বিষয়টি অশাস্ত্রীয়, অধর্মীয়, অযৌক্তিক, দৃষ্টিকটু এবং সর্বোপরি অপ্রয়োজনীয়।

বর্তমান পৃথিবীতে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ একে অন্যের অত্যন্ত কাছাকাছি সংলগ্ন হচ্ছে। একে অন্যের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করছে, বিষয়টি মনুষ্যত্বের জন্য শুভ লক্ষণ। অনেকগুলো খণ্ড খণ্ড আলাদা বগি একে অন্যের সাথে যুক্ত হয়ে একটি ট্রেন হয়। সকল বগির ঐক্যবদ্ধ ট্রেনই মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। প্রত্যেকটি বগির মধ্যস্থানে একে অন্যের সাথে একটি সংযোগ থাকে, সেই সংযোগচ্যুতি হলে বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এ মধ্যের সংযোগটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জগতের বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায় এবং জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা সবাই সবার সাথে সংযুক্ত হওয়া প্রয়োজন বৈশ্বিক মানবজাতির ঐক্যবদ্ধতার লক্ষ্যে। কিন্তু সে সংযোগ যেন অযৌক্তিক জোরজবরদস্তি করে না হয়। ট্রেনের একটি বগিকে আরেকটির সাথে সংযুক্ত করতে, একটি বগির পিঠে অন্যটিকে স্থাপন করি; তবে দুর্ঘটনা নিশ্চিত। কিন্তু বগিগুলো যদি ধারাবাহিকতায় একে অন্যের সাথে যুক্ত হয়ে চলতে থাকে; তবে সংঘর্ষ দুর্ঘটনার ভয় থাকে না। তেমনিভাবে পৃথিবীর জনসংখ্যার দিক থেকে অধিকাংশ মানুষ যাঁর অনুসারী ; সেই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রবর্তক যিশু খ্রিস্টকে আমরাও শ্রদ্ধা করি। কিন্তু মন্দিরের মধ্যে সংস্কৃত স্তোস্ত্রগীত, পূজামন্ত্র তৈরি করে যিশুখ্রিস্টের পূজা করাটা অযৌক্তিক এবং তা সনাতন ধর্মানুসারে সম্পূর্ণভাবে অশাস্ত্রীয়। লক্ষ্যনীয় যে, খ্রিস্টপূজার বিষয়টি ধর্মপ্রাণ কোন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরাও সমর্থন করেন না।

সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি :
১. পবিত্র বাইবেল, ঢাকা: বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি,২০০০
২.স্বামী অমৃতত্বানন্দ, ‘শ্রীরামকৃষ্ণ পূজা’, দিনাজপুর:শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশন, ২০১৮

কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
সহকারী অধ্যাপক,
সংস্কৃত বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে