বন্যা মোকাবেলায় করণীয়।।বন্যায় করণীয়।। Flood Coverege Process

0
1614

বন্যা মোকাবেলায় করণীয়

বাংলাদেশের হাওর বেষ্টিত ৭ টি জেলায় প্রায় প্রতি বছরই কম বেশি বন্যায় হানা দেয়।এমন কিছু বছর আছে বন্যা চরম আকার ধারণ করে।এমতাবস্থায় হাওর অঞ্চলের মানুষের জান- মাল রক্ষা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।এইসব প্রাকৃতিক দুযোর্গ মোকাবিলায় কিছু বিষয় মেনে চললে সামান্য হলে মানবিক বিপর্যয় এড়ানো যেতে পারে।তাই চলুন বন্যায় করণীয়গুলো আমরা জেনে নেই।

বন্যার পূর্ববর্তী প্রস্তুতি

১। উঁচু বাড়িঘর নির্মাণ

হাওরাঞ্চল যেহেতু বন্যা প্রবণ এলাকা তাই বিষয়টি সকলের মাথায় রেখে বাড়ি ঘর নির্মাণের সময় উঁচু করে (যে পরিমাণ উঁচু করলে মোটামুটি সেইফ ভাবা যায়) ঘর নির্মাণ করা উচিত।

২। বাড়ির আশেপাশে বাঁশের সুরক্ষা প্রাচীর নির্মাণ

বাড়ির আশ- পাশ যে দিকে খোলা অংশ সে দিক গুলোতে বাঁশ বা চিকন(ডলো) দিয়ে চালার চট সহ যোগে বাড়ী সুরক্ষা প্রাচীর নির্মাণ করতে হবে।

৩। ধান সংরক্ষণাগার,গোহাল ঘর নির্মাণে বাড়তি সতর্কতা

আগাম বন্যার বিষয়টি মাথায় রেখে ধান সংরক্ষণাগার এবং গোহালঘর নির্মাণে বাড়তি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।যথা সম্ভব মূল ঘরের সমান স্থানেই এসব নির্মাণ করতে হবে।নতুবা বন্যাকালীন ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে।

৪। গরু বা গবাদি পশুর জন্য খাদ্য সংরক্ষণে সতর্কতা জরুরী

মনে রাখতে হবে গবাদি পশুরাও কিন্তু জীব।তাছাড়া বর্তমানে একটি গরুর দাম লাখ টাকারও উপরে।অতএব এই অমূল্য সম্পদের খাদ্য সংরক্ষণে মানুষের খাদ্য সংরক্ষণের চেয়ে কম গুরুত্ব দেয়া একেবারেই বোকামীর পরিচয় হবে।তাই গবাদি পশুর খাদ্য সংরক্ষণের জায়গাটিও অনেক উঁচুতে নির্বাচন করতে হবে।

৫। আবহাওয়া বার্তা খেয়াল রাখা

হাওরাঞ্চলে সাধারনত বর্ষাকাল( আষাঢ়,শ্রাবন,ভাদ্র,আশ্বিন) এলেই বন্যার উপদ্রব বাড়ে।কাজেই এই সময় কালে নিয়মিত আবহাওয়া বার্তাগুলো শুনতে হবে।বলা বাহুল্য বর্তমানে স্যাটেলাইট উপগ্রহের মাধ্যমে আবহাওয়ার নিখুঁত পূর্ভাবাস দেয়া সম্ভব হচ্ছে।তাই আবহাওয়া বার্তাগুলো সতর্কভাবে খেয়াল রাখলে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশেই কমানো যেতে পারে।

৬। যোগাযোগের মাধ্যমগুলো সচল রাখতে হবে

বন্যা আসলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হবে এটি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।এমতাবস্থায় পরিস্থিতি বুঝে আগেবাগেই হাতের মোবাইলগুলো ফুল চার্জ দিয়ে রাখা,প্রয়োজনে পাওয়ার ব্যাংক চার্জ দিয়ে রাখতে হবে।

৭। রিচার্জেবল লাইটগুলো চার্জ দিয়ে রাখা

আবহাওয়া বার্তার উপর ভিত্তি করে রিচার্জেল লাইটগুলো পূর্ণ চার্জ দিয়ে রাখতে হবে।কারণ বিদ্যুৎ চলে গেলে রাত্রে অন্ধকারে পুরো এলাকা গ্রাস করবে, মহা সংকট দেখা দেবে।এগুলো আগেই মাথায় রাখতে হবে।

৮। পানির ট্যাংকি বা ড্রামে পানি সংরক্ষণ করতে হবে

বন্যায় আপনার চতুর্দিকে পানি থাকলে পান করার মতো পানি খোঁজে পাবেননা আপনি।তাই পানির ট্যাংকি বা বড় ড্রামের মধ্যে আপনাকে অবশ্যই পানি সংরক্ষণ করতে হবে।তাহলেই কেবল কিছুটা হলেও বন্যার দুর্ভোগ হতে রেহাই পেতে পারেন।

বন্যাকালীন সময়ে করণীয়

৯। খাদ্য প্রস্তুতের সাথে জড়িত সকল কিছু শুকনো স্থানে রাখুন

বন্যাকালীন সময়ে খাবারের তীব্র সংকট দেখা দেয়।ভাতে মাছে বাঙালী কখনই বিস্কুট, ফাস্টফুড খেয়ে বাঁচতে পারবেনা।তাই খাদ্য প্রস্তুতের সাথে জড়িত যেমন চুলা,চাল,ডাল,সবজি,পানি ইত্যাদি সহ বাসন-কোসন সকল কিছু শুকনো স্থানে নিরাপদে রাখুন।

১০। শিশু- বৃদ্ধ, বৃদ্ধাদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখুন

বন্যায় বাচ্চা, শিশু, বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখুন।কারণ এরা যেকোন সময় পানিতে পড়ে তলিয়ে যেতে পারে।তাই যথা সম্ভব এদেরকে আগে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিন।এদের প্রতি সার্বক্ষণিক সজাগ দৃষ্টি রাখুন।

১১। বন্যার পানি পান থেকে বিরত থাকুন

পরিবারের কাউকেই বন্যার পানি পান করতে দিবেননা।কারন এই পানি বিভিন্ন খারাপ জায়গা বেয়ে আসে।কাজেই এই পানিতে বিভিন্ন জীবানু থাকাটা একবারে স্বাভাবিক।তাই এই পানি পান থেকে সবাই বিরত থাকুন।

১২। শুকনো খাবার সংগ্রহে রাখুন

বন্যায় নিয়মিত রান্না কোনভাবেই সম্ভব নয়।এমতাবস্থায় শুানো খাবার যেমন চিড়া,মুড়ি,গুড়,বিস্কিট সহ বিভিন্ন প্রকার শুকনো খাবার সংগ্রহে রাখুন।

১৩। আশংকা জনক মনে হলে বন্যাশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিন

বন্যার পরিস্থিতি আশংকাজনক মনে হলে দ্রুত উঁচু দালান কিংবা বন্যাশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিন।

১৪। যেকোন মূল্যে মোবাইল খোলা রাখা ব্যবস্থা করুন

বন্যার মতো দুর্যোগে সার্বক্ষণি মোবাইল খোলা রাখার ব্যবস্থা করুন। প্রয়োজনে পাওয়ার ব্যাংকের সহযোগিতা নিন।কারণ আপনার আত্মীয় স্বজন আপনাকে ফোনে না পেলে খুবই উৎকন্ঠায় থাকবে।তাছাড়া আপনার অবস্থান আপনি কাউকে না জানাতে পারলে কেউ আপনাকে সাহায্য করকে আসবেনা।

১৫। যেকোন মূল্যে চার্জার লাইট, বা মোমবাতি সংগ্রহে রাখুন

মনে রাখবেন অন্ধকার মানুষকে ভয়ার্ত করে তুলে।এমন বিপদে রাত্র হলে মাস্ট লাইট লাগবেই।সে ক্ষেত্রে চার্জার লাইট থাকলে অনেকটা কষ্ট লাগব হবে।অনেক সময় চার্জও শেষ হয়ে যেকে পারে সেক্ষেত্রে পেন্সিল লাইট চালিত লাইট ব্যবহার করতে পারেন।তাও না পারলে মোমবাতি সাথে রাখুন।

১৬। বিদ্যুতের লাইন খেয়াল রাখুন

যথা সম্ভব বিদ্যুতের লাইন খেয়াল রাখুন।কোন কারণে কোন লাইনের তার ছিড়ে গেলে হাঠাৎ বিদ্যুৎ চলে আসলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

১৭। টিভি,ফ্রিজ,জমির দলিল,শিক্ষাগত সনদ,চাকরীর ডকুমেন্ট নিরাপদ স্থানে রাখুন

আপনার মূল্যবান জিনিসগুলোর মধ্যে টিভি, ফ্রিজ,জমির দলিল,শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র,চাকরির ডকুমেন্টগুলো নিরাপদ স্থানে রাখুন।কারন এসবের একটি ক্ষতি হলেই আপনার অনেক বড় আর্থিক ও মানসিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে।

১৮। জেলা,উপজেলা,ইউনিয়ন কর্তৃক প্রদানকৃত সহায়ক নাম্বার গুলো সংগ্রহে রাখুন

১৯। গুরুত্বপূর্ণ আত্মীয় স্বজন,ব্যক্তিবর্গের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহে রাখুন

যে সকল আত্মীয় স্বজন বিপদে আপনার পাশে দাঁড়াতে পারে,কিংবা আপনার আত্মীয় স্বজন নয় কিন্তু মানবিক মানুষ এমনসব মানুষদের নাম্বার সংগ্রহে রাখুন।বিপদে ফোন দিলে সাহায্য পেলে পাওয়া যেতেও পারে।

২০। মানবিক সংগঠন সমূহের নাস্বার সংগ্রহে রাখুন

যেসব সংগঠন মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসে এদের নাম্বারগুলো সংগ্রহে রাখুন।এতে বিপদে ফোন করলে কাজে আসতে পারে।

২১। আপনার নিকটবর্তী বন্যাশ্রম কেন্দ্র অথবা স্কুল, কলেজের ঠিকানা জেনে রাখুন

আপনার আশে পাশে বন্যাশ্রম কেন্দ্র থাকলে অথবা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ থাকলে এগুলোর ঠিকানা জেনে রাখুন।বন্যায় পানির পরিমান বেশি হলে এসব স্থানে আশ্রয় নিতে সহজ হবে।এতে কিছুটা হলেও উপকার হতে পারে।

বন্যার পরবর্তী সতর্কতা

২২। বন্যার পরে হুট করে ঘরে প্রবেশ করবেননা

বন্যার পরে হুট করে ঞরে প্রবেশ করবেননা।এতে সাপ বা বিভিন্ন বন্য প্রাণীর আক্রমণের স্বীকার হতে পারেন।তাই চার্জ লাইট সাথে নিয়ে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বুঝে প্রবেশ করবেন।

২৩। ঘরের সদস্যদের প্রতি,নিজের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখুন

বন্যার পরে মহামারি,রোহ-বালাই হতে পারে।তাি পরিবারের অন্যান্যদের প্রতি,নিজের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখুন।

২৪। বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্থ হলে দ্রুত মেরামত করুন

বন্যায় বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্থ হলে দ্রুত মেরামত করুন।কারন দীর্ঘদিন নির্ঘুম থাকলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পারে।তাই এই ব্যাপারটা সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিন।

লেখক

জীবন কৃষ্ণ সরকার
কবি ও প্রাবন্ধিক

বিঃ দ্রঃ লেখাটি জনস্বার্থে শেয়ার দিন।কপি করবেননা।বিশেষ প্রয়োজনে কপি করলে আমার নাম সহ পোষ্ট করুন।শুভকামনা সকল পাঠকদের জন্য।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে