পশুবলি নয় ছাগ বলতে যা বলি দিতে বলা হয়েছে

0
1907

সনাতনী শাস্ত্রে পাঁঠা বলির কোনো উল্লেখ নেই। উল্লেখ রয়েছে ছাগ বলির কথা। “ছাগ” মানে ছাগল বা পাঁঠা নয়। “ছাগ” শব্দের অর্থ ষড়রিপু। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য – এই ষড়রিপুকে এক কথায় ছাগ বলে। প্রকৃত অর্থে এই ষড়রিপুকেই বলি দিতে হয়। মায়ের কাছে নিরীহ প্রাণী বলি দিয়ে আমরা নিজেরাই পাপের ভাগিদার হচ্ছি।
সংস্কৃততে একটি শব্দেরই অনেক অর্থ থাকতে পারে। যেমন “জীঘ্রং” শব্দের একটি অর্থ হত্যা করা এবং আরেকটি অর্থ দান করা। তদ্রুপ “ছাগ” শব্দের একটি অর্থ ছাগল, আরেকটি অর্থ ষড়রিপু।
একটি শ্লোকের প্রসঙ্গ তুলে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি।
“যুধিষ্ঠিরস্য য়া কন্যা নকুলেন বিবাহিতা…”
এই শ্লোকটি যদি কোনো সাধারণ মানুষকে শোনানো হয়, তাহলে তিনি এর অর্থ করবেন, যুধিষ্ঠিরের মেয়েকে চতুর্থ পান্ডব নকুল বিয়ে করেছে।
কিন্তু না, তা একদমই নয়। আমাদের ভারতীয় সনাতনী সংস্কৃতি এইরূপ নোংরা নয়।
তাহলে এই শ্লোকটির প্রকৃত অর্থ কী? চলুন, তা জানার চেষ্টা করি।
যিনি সর্বদাই স্থির, তিনিই যুধিষ্ঠির। এখানে “যুধিষ্ঠির” মানে হিমালয় পর্বতকে বোঝানো হয়েছে আর হিমালয়ের কন্যা হচ্ছেন পার্বতী। পার্বতীর সাথে নকুলের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে।
ন কুল = অকুল; এখানে নঞ-তৎপুরুষ সমাস, যাঁর কোনো কুল নেই, তিনিই হচ্ছেন নকুল অর্থাৎ মহাদেব শিব। তাহলে এখানে “নকুল” মানে চতুর্থ পান্ডব নয়।
অর্থাৎ শ্লোকটির যথাযোগ্য অর্থ হচ্ছে, হিমালয়ের কন্যা পার্বতীর সহিত মহাদেব শিবের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে।
এইভাবেই সংস্কৃত শব্দের ভুল অর্থ সাজিয়ে, বেদের ভুল অনুবাদ করে বেদের মধ্যে “গোমাংস ভক্ষণ”-এর প্রসঙ্গ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে অনেকে ! এটি তো শুধুমাত্র একটি-দুটি উদাহরণ। এরকম হাজারো উদাহরণ রয়েছে। সনাতনী সংস্কৃতিকে বিকৃত করার জন্য অন্য ধর্মের মানুষ সংস্কৃত শব্দের ভুল অর্থ বের করে এবং আমরা, সনাতনীরাও সংস্কৃত না জানার দরুন সেই ফাঁদে পা দিই।
সংস্কৃত না বোঝার কারণে আমাদের সনাতনী সমাজে আরও অনেক কুসংস্কার তৈরি হয়েছে। যেমনঃ-
১. শিব লিঙ্গ-এর অর্থ শিবের প্রতীক, মহাদেব শিবের লিঙ্গ নয়।
২. তেত্রিশ কোটি দেবতা মানে তেত্রিশ প্রকার দেবতা, সংখ্যায় ৩৩ কোটি দেবতা নয়।

অতএব দয়া করে কোনো হিন্দু উৎসবে পশুহত্যা করবেন না বা এই কাজকে সমর্থনও করবেন না। 🙏

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে