গবেষণা প্রবন্ধঃ প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার

0
140

গবেষণা প্রবন্ধঃ প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার

কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ

আমি প্রথমেই পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নিকট অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সিলেট সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ এর সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দের প্রতি।আরো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সহ শিক্ষকবৃন্দ যাদের সহযোগিতায় আমার কর্মসহায়ক গবেষণাটি সম্পাদন করতে পেরেছি।কর্ম সহায়ক গবেষণা একটি সময় সাপেক্ষ এবং কঠিন বিষয় হলেও উক্ত কলেজের শিক্ষবৃন্দের সহায়তায় তা করতে সম্পন্ন হই।এজন্য উনাদের প্রতি আবারো বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

উৎসর্গঃ

শ্রদ্ধেয় বাবা ও মা’ কে

গবেষকের পরিচিতিঃ

নামঃ জীবন কৃষ্ণ সরকার
বিএড ২০১৯-২০(২০তম ব্যাচ)
আইডি নংঃ ২০০০২৪২১৪
বাংলাদেশ উন্মোক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
স্টাডি সেন্টারঃ সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ,সিলেট।

কর্ম সহায়ক গবেষণা পরিচালনা কমিটি

সহযোগিতায়ঃ

মোঃ খছরু মাহমুদ
প্রভাষক,সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ সিলেট
জনাব মনিরুজ্জামান
প্রভাষক,সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ,সিলেট

নির্দেশনায়ঃ

ড. দিদার চৌধুরী
অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ,সিলেট।

প্রস্তাব অনুমোদনঃ

বাংলাদেশ উন্মোক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত বি.এড ২০১৯-২০ ইং শিক্ষাবর্ষের প্রশিক্ষণার্থীদের কর্ম সহায়ক গবেষণার কোর্সের অংশ হিসেবে ০২/১২/২২ তারিখে জীবন কৃষ্ণ সরকার,আইডি ২০০০২৪২১৪ এর ২ নং প্রস্তাবিত “প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার” শিরোনামে কর্মসহায়ক গবেষণা প্রস্তাবটি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, সিলেট এর কর্মসহায়ক গবেষণা কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হয়।

গবেষণা কার্য অনুমোদন

এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, জীবন কৃষ্ণ সরকার,আইডি – ২০০০২৪২১৪,প্রস্তাবিত “প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার” শিরোনামে কর্ম সহায়ক গবেষণাটি সরকারি টিচার্স ট্রেণিং কলেজ,সিলেট এর কর্ম সহায়ক গবেষণা কমিটি, বাংলাদেশ উন্মোক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত,বি.এড কোর্সের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী বি.এড ২০১৯-২০ ইং শিক্ষাবর্ষের প্রশিক্ষণার্থী জীবন কৃষ্ণ সরকার, কর্ম সহায়ক গবেষণা কোর্সের অংশ হিসেবে যথা নিয়মে নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করেছেন।

সূচিপত্র

অধ্যায় এক

১.১। ভূমিকা
১.২। গবেষণার ধরণ
১.৩। গবেষণার বিবরণ
১.৪। গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
১.৫। গবেষণায় ব্যবহৃত শব্দ ও শব্দ সমূহের ব্যবহার
১.৬। গবেষণার তাৎপর্য

অধ্যায় দুই

২। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পর্যালোচনা

অধ্যায় তিন

৩.১। বিষয়
৩.২। গবেষণার স্থর সমূহ
৩.৩। উপাত্ত সংগ্রহ
৩.৪। উপাত্ত সংগ্রহের কৌশল ও পদ্ধতি
৩.৫। তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি
৩.৬। তথ্য উপস্থাপন
৩.৭। উপাত্ত বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণ
৩.৮। তথ্য বিশ্লেষণ
৩.৯। ফলাফল
৩.১০। সিদ্ধান্ত সমূহ
৩.১১। উপসংহার

অধ্যায় চার

৪.১। সুপারিশমালা
৪.২। গ্রন্থপঞ্জি
৪.৩। পরিশিষ্ট
৪.৪। নমুনা ও প্রশ্নমালা (সংযুক্তি)

অধ্যায় এক

১.১। ভূমিকাঃ

কর্মসহায়ক গবেষণা বা Action research হলো এমন এক ধরনের গবেষণা যা তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে করা হয়। কারো দক্ষতা বিষয়ক কোনো সমস্যার তুলনামূলকভাবে কার্যকরী সমাধানের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য যে গবেষণা পরিচালিত হয় তাকে কর্মসহায়ক গবেষণা বলে। কর্মসহায়ক গবেষণর মূল লক্ষ্য হলো ব্যক্তির বিদ্যমান অবস্থার বা কর্মদক্ষতার তুলনামূলক ইতিবাচক ও কার্যকর পরিবর্তন। এ ধরনের গবেষণা হয়ে থাকে পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপট নির্ভর। পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট বিচারে সমস্যা নির্ধারণের পর তা সমাধানের উদ্দেশ্যে কর্মসহায়ক গবেষণা পরিচালিত হয় যা পর্যবেক্ষণযোগ্য অভিজ্ঞতা ও পরীক্ষণের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কর্মসহায়ক গবেষণা সর্বদা অংশগ্রহণকেন্দ্রিক ও চলমান প্রক্রিয়া।
১৯৪৬ সালে কুর্ট লুইন কর্মসহায়ক গবেষণার তিনটি নীতি; এবং সংজ্ঞা প্রদান করেন যার কারনে তাকে কর্মসহায়ক গবেষণার জনক বলা হয়। স্টিফেন ম্যাক্সওয়েল কোরি ১৯৫৩ সালে ‘Action Research to Improve School Practices’ নামে একটি বই লেখেন যার মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রথম কর্মসহায়ক গবেষণা প্রয়োগের সূচনা হয়।গবেষণা হলো সত্য অনুসন্ধানের জন্য পরিচালিত বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া। গবেষণা পরীক্ষিত বিশেষ যুক্তিপূর্ণ নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত হয় যার মূল লক্ষ্য হলো বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খোঁজা। বিভিন্ন প্রকারের গবেষণার মধ্যে কর্মসহায়ক গবেষণা একটি জনপ্রিয় ধরন যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তার পেশাগত কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে সেই সমস্যা সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেন।

১.২। গবেষণার ধরণঃ

এটি একটি সামাজিক অবক্ষয় রোধমূলক গবেষণা।বর্তমান বিশ্বে ছেলেমেয়েদর যে জিনিসটা সবার আতংকের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা হচ্ছে ছেলেমেয়েদের নৈতিক অবক্ষয়।বিশেষ করে ছেলেমেয়েদের অবাধ চলাফেরা,অত্যাধিক মোবাইল ব্যবহার, শিক্ষকের অবাধ্য চলাফেরা,মা-বার নির্দেশ না মানা সহ বিভিন্ন কারণে বর্তমান ছেলমেয়েরা নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে দিন দিন। এই অবস্থা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণগুলোকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে অচিরেই জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে,সরকারের সকল প্রচেষ্টা ব্যার্থতায় পর্যবসিত হবে।তাই এই ব্যাপারে ব্যক্তি,রাষ্ট্র তথা সমাজকে অতিদ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

১.৩। গবেষণার বিবরণঃ

প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার।

ইদানিং প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের মাঝে শিক্ষকের কথা বার্তা না মানা,প্রতিদিন বিভিন্ন ছেলেমেয়েদের মাঝে ঝগড়া ফ্যাসাদ সহ নানা ধরণের অনৈতিক কর্মকান্ডের খবরাখবর পাওয়া যাচ্ছে।সত্যিকার অর্থেই এসব খবর বিদ্যালয়টির সুনামের জন্য হুমকি স্বরুপ।অতি সত্তর এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বিদ্যালয়টি ভবিষ্যৎ পরিচালনা নিয়ে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পরতে হবে।তাই অতি সত্তর বিদ্যালয় পরিচালনা বোর্ড, শিক্ষক,শিক্ষার্থী,অভিভাবক সকলের এই বিষয়টি নিয়ে বিশদভাবে ভাবতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

১.৪। গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

প্রত্যেকটা গবেষণারই কোন না কোন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে। ঠিক তেমনি এই গবেষণাটিরো কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে।নিচে তা সুস্পষ্টভাবে তোলে ধরা হলো।

১। প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ উদঘাটন ও তা দূরীকরণ।
২। শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করা।
৩। শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।
৪। শিক্ষার্থীদের আদর্শ ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
৫। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মনুষত্যবোধ চর্চা করানো।

১.৫। গবেষণায় ব্যবহৃত শব্দ ও শব্দসমূহের ব্যবহার

অবক্ষয়ঃ নীতি বহির্ভূত কাজ করা এবং নিয়মিত নীতি বিবর্জিত কাজ চর্চাকে অবক্ষয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রতিকারঃ উদ্ভুত সমস্যা সমাধান করার প্রক্রিয়া বা পথ খোঁজা।

শিক্ষাঃ শিক্ষা হচ্ছে সেই সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপ যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলতে পারে।

প্রশিক্ষকঃ যেকোন শিক্ষক ন্যূনতম ২য় শ্রেণীর স্নাতক সহ ২য় শ্রেণীর স্নাতকোত্তর ডিগ্রী প্রাপ্ত তার সঙ্গে ২য় শ্রেণীর বি.এড ডিগ্রীধারী,তিনি কোন শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে পাঠদান কাজে নিয়োজিত আছেন,তাদেরকে প্রশিক্ষক বুঝানো হয়েছে।

গবেষকঃ গবেষক অর্থাৎ কোন সমস্যার উত্তর বা সমাধান খোঁজে পাওয়া,যে ব্যক্তি এই সমাধান খোঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনিই গবেষক।

১.৬। গবেষণার তাৎপর্য

একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে এই গবেষণাটি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে।শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ নির্ণয় করে তা প্রতিকার করতে পারলে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে।বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের কাছেও গবেষণাটি অত্যন্ত তাৎপর্য পূর্ণ।তাছাড়া শিক্ষার্থীদের মনুষত্ববোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতেও গবেষণাটির বেশ গুরুত্ব রয়েছে।

অধ্যায় দুই

২। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পর্যালোচনা

গবেষণ বিষয়ের সমস্যা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পর্যালোচনা অত্যন্ত জরুরী।এ থেকে গবেষণার বিষয়ের পটভূমি,উদ্দেশ্য,অনুমিত সিদ্ধান্ত,উপকরণ,গবেষণার পদ্ধতি,ফলাফল এবং সুপারিশ ইত্যাদি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা লাভ করা যায়।কিন্তু আমার জানামতে বর্তমান গবেষণার শিরোনামটির সঙ্গে কোন গবেষণার বা কোন বই পুস্তক এমনকি কোন জার্নাল বা সাময়িকীতে একটি প্রবন্ধও প্রকাশিত হয়নি।এই গবেষণা শিরোনামটি সম্পূর্ণভাবে আমার চিন্তাভাবনা থেকে শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণ করে উদ্ভাবিত সমস্যা সমাধানের প্রয়াস মাত্র।তাই এই গবেষণায় কোন সাহিত্য পর্যালোচনা উপস্থাপনা সম্ভব হয়নি।

অধ্যায় তিন

৩.১। বিষয়

সিলেট দক্ষিণ সুরমা উপজেলার প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থী যারা ইতোমধ্যেই নৈতিক অবক্ষয়জনিত শিক্ষার্থী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে তাদেরকে আমি আমার গবেষণার বিষয়বস্তু হিসেবে সনাক্ত করেছিলাম।

৩.২। গবেষণার স্তর সমূহঃ

আমি উক্ত গবেষণার জন্য প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম- দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বেচে নিয়েছিলাম এবং গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল ও পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিলাম।সবই নির্দিষ্ট সময়সীমার ভেতরে এবং স্বল্প খরচে করেছিলাম।

৩.৩। উপাত্ত সংগ্রহঃ

গবেষণা মানেই উপাত্ত সংগ্রহ করতেই হবে।গবেষণার সঠিকতা নির্ভর করে সঠিক তথ্য সংগ্রহের উপর।অপর পক্ষে তথ্য সংগ্রহের সময় কোন ভুল তথ্য থাকলে গবেষণার ফলাফল ও ভুল আসবে,এটাই স্বাভাবিক।কর্ম সহায়ক গবেষণার জন্য সবাই তথ্যের প্রাথমিক উৎসের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়।প্রাথমিক উৎসের ক্ষেত্রে তথ্য বা উপাত্ত সাধারনত সরাসরি বিভিন্ন পদ্ধতির ব্যবহার করে সংগ্রহ করেছি।যেমন – সাক্ষাতকার,প্রশ্নমালা ইত্যাদির দ্বারা প্রাপ্ত উপাত্ত।প্রাথমিক উপাত্ত হচ্ছে সেই সমস্থ উপাত্ত যা সরাসরি উৎস হতে পেয়েছি।

৩.৪। উপাত্ত সংগ্রহের কৌশল ও পদ্ধতিঃ

কর্মসহায়ক গবেষণার যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্যে বিভিন্ন পদ্ধতি ও উপকরণ ব্যবহার করে উপাত্ত সংগ্রহ করেছি।উপাত্ত সংগ্রহের পর গবেষণাকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য যৌথভাবে এবং এককভাবে প্রয়োগ করেছি।প্রয়োগের মাধ্যমে গবেষণা সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।

৩.৫। তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিঃ

১। শিক্ষানবিশ ডায়েরি
২। পর্যবেক্ষণ
৩। সাক্ষাতকার ও আলোচনা
৪। প্রমাণ পত্রাদি
৫। প্রশ্নপত্র
৬। চেকলিস্ট
৭। কেস স্টাডি
৮। পূর্বের দলিল

উল্লেখিত পদ্ধতিসমূহের মাঝে প্রশ্নপত্র,পর্যবেক্ষণ,পূর্বের দলিল,প্রমাণ পত্রাদি ইত্যাদি পদ্ধতির অধিক ব্যবহার করে উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। উন্মোক্ত ও বদ্ধ দুই ধরণের প্রশ্নই প্রশ্নমালায় অন্তর্ভুক্ত করেছি।বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের নিকট হতে তথ্য সংগ্রহ করেছি।অভিভাবকদের প্রশ্ন দিয়ে পূরণ করতে বলেছি।

৩.৬। তথ্য উপস্থাপনঃ

ছাত্রদের নিকট হতে সংগৃহিত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায় যে, নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে এমন সত্তর ভাগ শিক্ষার্থী কোন না কোন কারণে আগেই নৈতিক স্খলন হয়েছে এমন বহিরাগত শিক্ষার্থীর সাথে মেলামেশা করে।অল্প কিছু সংখ্যক আছে তাদের মা বাবার নৈতিক অবক্ষয় দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছে,বাকি একটা অংশ অজ্ঞানতাবশত নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হয়েছে।

অভিভাবকদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য হতে জানা যায়,তাদের সন্তানরা অধিকাংশ দিনই সন্ধ্যায় বাসায় থাকেনা,পাড়ার বাজে ছেলে মেয়েদের সাথে তাদের উঠা বসা,মা -বাবার কথা কানে না দেয়া,স্কুল কামাই করা তাদের নৈমিত্তিক অভ্যাস।পরীক্ষার ফলাফলেও তাদের করুণ অবস্থা।

শিক্ষার্থীদের হাজিরা পত্রের রেকর্ড অনুযায়ী বিদ্যালয়ে উপস্থিতি এবং পরীক্ষায় গড় নম্বরের একটি টেবিল নিচে প্রদত্ত হলো-

১। রুবেল চন্দ্র পাল -মোট কার্যদিবস ১০০- উপস্থিতি -৩০, প্রাপ্ত নম্বরে শতকরা পরিমান- ২৫%
২। শাহরিয়ার হুসেন শুভ- মোট কার্যদিবস ১০০- উপস্থিতি -২৫, প্রাপ্ত নম্বরে শতকরা পরিমান- ২২%
৩। মোঃ আবুল হাসনাত-মোট কার্যদিবস ১০০- উপস্থিতি -২৩, প্রাপ্ত নম্বরে শতকরা পরিমান- ২৬%
৪। ফজল আহমদ-মোট কার্যদিবস ১০০- উপস্থিতি -২৮, প্রাপ্ত নম্বরে শতকরা পরিমান- ২১%
৫। শিবলু আহমদ-মোট কার্যদিবস ১০০- উপস্থিতি -২০, প্রাপ্ত নম্বরে শতকরা পরিমান- ১৯%

৩.৭। উপাত্ত বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণ

যেকোন গবেষণার ক্ষেত্রে উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ,সংশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্তপূর্ণ।উক্ত গবেষণায় ও সঠিকভাবে উপাত্ত বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণ করা হয়েছে।

৩.৮। তথ্য বিশ্লেষণ

উপরোক্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে,শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে মূলত কয়েকটি প্রধান কারণে। যেমন বাচ্চারা বিদ্যালয়ের সময়ে অনেকেই বিদ্যালয়ের বাহিরে অবস্থান করে।শিক্ষকের আদেশ নির্দেশ অমান্য করা ঐ সব স্টুডেন্টদের নৈমিত্তিক ব্যাপার।মা- বাবাকে তো একবারেই সম্মান করেনা,নিয়মিত স্কুলে আসেনা,স্কুলে আসলেও স্কুল ছুটির আগেইে বিভিন্ন অজুহাতে চলে যায়,রেস্টুরেন্টে আড্ডা দেয়।মেয়েদেরকে অশালীন ভাষায় টিজ করে,ক্লাসে একবারে মনোযোগী নয় বরং ক্লাসে শিক্ষকদের অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করে বিভ্রান্ত করে,ক্লাসে হট্টগোল করে শ্রেণিকক্ষকে বিনোদন কেন্দ্র বানিয়ে ফেলে,পাড়ার বখাটে ছেলেদের সাথে ওদের চলাফেরা,রাজনৈতিক চামচাগিরি করার অভ্যাস অনেকের।অনেকের আবার বিড়ি,চুরুট সহ বিভিন্ন মাদকে আসক্তি রয়েছে।সব মিলিয়ে নানা কু-অভ্যাসের ফসল ওদের এই নৈতিক অবক্ষয়।

৩.৯। ফলাফল

মাদকের কুফল নিয়ে,নৈতিক অবক্ষয়ের বিভিন্ন কুফল নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।শিক্ষার্থীদের মাঝে অস্বাভাবাবিক বা উছৃঙ্খল আচরণ উল্যেখযোগ্য হারে হৃাস পেয়েছে।বিদ্যালয়েও তাদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে,ক্লাসেও তাদের মনোযোগিতা বেড়েছে।

৩.১০। সিদ্ধান্তসমূহ

১। শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিক অবক্ষয়ের কুফল নিয়ে আলোচনা করলে তাদের মাঝে এসব বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
২। পড়ালেখার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ে।
৩। মা-বাবা! ও শিক্ষকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বাড়ে।
৪। বিদ্যালয়ের উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়।
৫।মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করতে শেখে।

উপসংহারঃ

আমি গবেষণাটি অনেক সমস্যা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করেছি।এই গবেষণাটি সম্পন্ন করতে আমার প্রতিষ্ঠাণ প্রধান ও সহকর্মী শিক্ষকদের সহযোগিতা নিয়েছি।অনেক অভিভাবকের সাক্ষাতকার গ্রহণ করেছি,অনেক শিক্ষার্থীদের ও সাক্ষাতকার নিয়েছি,সর্বোপরি অনেক দিন বিষয়টা নিয়ে ভেবেছি।যদি আমার এই গবেষণাটি প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম উপকারে আসে তাহলেই আমার এই পরিশ্রমটি সার্থক হয়েছে বলে মনে করবো।

অধ্যায় চার

সুপারিশমালাঃ

১। বছরে ন্যূনতম একবার নৈতিক অবক্ষয় জনিত বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী,অভিভাকদের সাথে নিয়ে সেমিনার বা আলোচনা সভা করতে হবে।
২। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।
৩। সন্দেহজনক আচরণ পরিলক্ষিত হলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪।প্রধান শিক্ষক সহ সহকর্মীদের আন্তরিক হতে হবে।
৫।শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে তাদের সাথে মিশতে হবে।

গ্রন্থপঞ্জি

১। শিক্ষামূলক গবেষণা
মোঃ মফিজুর রহমান
২। নৈতিক অবক্ষয়ের রুপ রেখা
রায়হান আহমেদ তফাদার
৩। নৈতিক অবক্ষয় ও তার প্রতিকার
মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম
৪। প্রবন্ধঃ অবক্ষয় ঠেকাতে পারে নৈতিক শিক্ষা
মোঃ তানভীর কায়ছার

পরিশিষ্টঃ

সাক্ষাতকারঃ কাউকে কোন প্রশ্ন করে কিছু জানা
ইতিবাচকঃ কোনকিছুর ভালো দিক।
অবক্ষয়ঃ ভালো কোন কিছু থেকে বিচ্ছ্যুত হওয়া
মানবিক গুণঃ ভালো কিছু গুণ।
উপাত্তঃ যে সব তথ্য গবেষণার প্রশ্নের উত্তর বের করতে সহায়তা করে

সংযুক্তিঃ

যে সব প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের করা হয়েছিল

১। নিত্য দিনে চলা ফেরায় তোমাদের সাধারনত কোন কোন বিষয়গুলো ভালো লাগে?
২। মাদক বলতে তোমরা কি বুঝ?
৩। ইভটিজিং বলতে কি বুঝ?
৪।নেশাজাতীয় দ্রব্যের শারীরীক প্রভাব কি?
৫। মাদকের অপকারিতা সম্পর্কে কি জানো?
৬।তোমাদের মধ্য কে কে আছে ক্লাসে এসে স্যারদের না বলে চলে যায়?
৭। ঘন ঘন স্কুল কামাই করে কে কে?
৮। তোমাদের মধ্যে কে কে পড়া লেখায় অমনযোগী?
৯। কাদের রোজাল্ট খুবই খারাপ অবস্থা?
১০।কারা কারা শিক্ষকদের সাথে ভালো ব্যবহার করেনা?

অভিভাবকদের প্রতি প্রশ্ন

১। আপনার বাচ্চা স্কুল কামাই কেমন করে?
২। আপনার বাচ্চা নিয়মিত পড়ালেখায় বসে কিনা?
৩। সন্ধ্যার পর বাচ্চা ঘরে থাকে কি না?
৪। পাড়ার বখাটেদের সাথে আপনার বাচ্চার উঠা বসা আছে কিনা।
৫।আপনার বাচ্চা আপনাদের সাথে কোন দূর- ব্যবহার করে কিনা।
৬।বাচ্চাকে কোন উপদেশ বা নিষেধ করলে মানে কি না?
৭।ভালো কাজ গুলোতে আপনার বাচ্চার অংশগ্রহণ কেমন?
৮। কোন প্রকার মাদক সেবনের সাথে আপনার বাচ্চার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা?
৯। আপনার বাচ্চার মাঝে কোন প্রকার অস্থিরতা ভাব পরিলক্ষিত করেছেন কিনা?
১০। আপনার বাচ্চার বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল কেমন?

গবেষণাপত্র জমাদানের তারিখঃ ০৭/০৩/২০২৩ইং
Source: bisleshon.com
প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী,অভিভাবক,বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে