শিক্ষা বাঁচাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণগুলো জাতীয়করণ জরুরী

0
120

কি লিখবো ভেবে পাচ্ছিনা।এমন একটা দেশে বাস করি যেখানে ছোট ছোট কোমল বাচ্চাদের সরকারি,বেসরকারি শিখানো হয়,তাদের শিখানো হয় তুমি কম মেধাবী তাই তুমি বেসরকারিতে পড়ো,তোমার বন্ধু বেশি মেধাবী তাই সে সরকারি স্কুলে পড়ে।বিষয়গুলো শোনতে সাধারণ মনে হলেও গভীরে চিন্তা করলে ব্যাপারগুলো মোটেও সামান্য নয়।বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় প্রতিটি দেশের সরকার যখন সকল প্রকার বৈষম্য নিরসন করে একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করছে,সেখানে আমাদের দেশের সরকার কেবল ছেলে,মেয়ে,প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের একত্রে ক্লাস করানোকেই একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা মনে করে সেই মোতাবেক কাজ শুরু করছে।অথচ একীভূত শব্দের প্রধান অর্থই হচ্ছে সকল প্রকার বৈষম্য নিরসন।তাহলে সত্যিকার অর্থেই যদি একীভূত শিক্ষা চান তাহলে সর্বাগ্রে সকল বিদ্যালয় সরকারি করতে হবে,বাচ্চাদের বেতন বৈষম্য রোধ করতে হবে।নতুবা আপনাদের একীভূত শিক্ষা নিয়ে ফাঁকা বুলি কখনোই কোন কাজে আসবে না।বন্ধুরা আমার আজকের টপিক শিক্ষা বাঁচাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণগুলো জাতীয়করণ জরুরী।এই শিরোনামে লেখাটির যথার্থতা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করলাম,আশা করি সবাই পড়বেন।

এক. শিক্ষা কোন পন্য নয়ঃ

প্রথমত, শিক্ষা কোন পন্য নয় যে শিক্ষার্থীরা কিনে কিনে সংগ্রহ করবে বা অভিভাবকরা কিনে কিনে তাদের বাচ্চাদের দেবে।একটা দেশের সরকারকে নিয়মিত ট্যাক্স দিবে কি তার বাচ্চার শিক্ষা কিনে আনার জন্য ? তাহলে দেশের সরকার থাকার কি সুবিধাটা পেলো নাগরিক! শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার।যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত।আর এই শিক্ষাই যতি টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের নিকট বিক্রি করতে হয় সরকারকে, তাহলে মুখে মধ্যম আয়ের দেশ বলে, উন্নয়ন মেলার নামে তামসা করে করে কি আদৌ দেশের উন্নয়ন ট্যাবলেট পাবলিককে খাওয়ানো সম্ভব ? আর এই সমস্যা রোধ করতে হলে সরকারকে অবশ্য অবশ্যই সকল প্রকার বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা রহিত করে দেশের সকল বিদ্যালয়কে একযুগে জাতীয়করণ করতে হবে।

দুই. কোমল মতি বাচ্চাদের বৈষম্যহীন ভাবে গড়ে তুলতে

অঙ্কুরেই যে বাচ্চাকে আমরা সরকারি, বেসরকারি বৈষম্যের ট্যাবলেট গিলাচ্ছি সেতো বড় হয়ে কর্ম ক্ষেত্রেও এই বৈষম্যটা ধরে রাখবে।তাহলে এরা কর্ম ক্ষেত্রে নিজেরা মিলে মিশে সমমর্যাদায় চলবে কিভাবে? এইভাবে বৈষম্য নিয়ে কি একটা দেশ তথা জাতির আদৌ উন্নতি সম্ভব? তাছাড়া এত অল্প বয়সে যখন একটা বাচ্চা বুঝতে পারে তার মেধা কম তাই বেসরকারিতে পড়ে তখন তো সে পড়ার প্রতিই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।এভাবে অনেক বাচ্চাই মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে শিক্ষা থেকে অহরহ ঝরে পড়ছে যার সঠিক পরিসংখ্যান কেউই দিতে পারবেনা।তাই বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে ঝরে পড়া রোধ করে শতভাগ শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করতে চাইলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণগুলো জাতীয়করণের বিকল্প নেই।

তিন. শিক্ষার্থীর বেতন ও সুযোগ সুবিধা বৈষম্য দূর করণে

সরকার প্রতি উপজেলায় একটি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ সরকারি করেছেন।খোঁজ নিয়ে জানা যায় জাতীয়করণকৃত প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠাণই উপজেলা সদরে থাকে।প্রশ্ন হলো শহরে সবসময় সচ্ছল মানুষ থাকে। তাদের ছেলে মেয়েরা অল্প বেতনে অর্থাৎ নাম মাত্র বেতনে(২০/৩০ টাকা মাসে) পড়ালেখা করে আর গ্রমের কৃষক, দিনমজুর যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের জন্য কাজ করে যায়, সংসার চালাতে নুন আনতে পানতা পুরায়, তাদের ছেলেমেয়েরা ৩০০/৪০০ টাকা করে মাসিক বেতনে পড়াতে হয়,শোনতে আজব লাগেনা? অথচ কম বেতনে তো দিন মজুর সাধারণ মানুষের বাচ্চাদের পড়ার সুযোগ দেবার কথা ছিল। স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও কেন আজো এক দেশে দুই নীতির শিক্ষা ব্যবস্থা থাকবে? বিবেক জাগ্রত হোক।

চার. ঝরে পড়া রোধে

করোনা পরবর্তি বিশ্ব তথা বাংলাদেশ বেশ আর্থিক সংকটে যাচ্ছে।দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি যেনো অভিভাবকদের গলা চিপে ধরেছে।এমন অবস্থায় যে অভিভাবক দু,তিনটা বাচ্চা শুধু খাওয়া-পড়া করেই বাঁচিয়ে রাখতে পারছে না সেক্ষেত্রে বেসরকারি স্কুলের ৩০০ থেকে ৪০০/৫০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি বাচ্চার মাসিক বেতনে কিভাবে পড়া লেখা করাবেন ? তাইতো অকালেই ঝরে পড়ছে শত সহস্র বাচ্চা।এই ভাবে দেশ চললে দেশ অন্ধকারে ডুবতে কয় কাল লাগবে জনাব ?

পাঁচ. মেধাবীদের শিক্ষকতায় টানতে

আপনি মানুন আর না মানুন,টাকাই আজকাল সকল কিছুর চাকা।এর প্রমাণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে এখন ছেলে মেয়েরা প্রাইমারীতে জব নিচ্ছে কেন জানেন? কেবল বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ করার কারণে।কই এত দিন তো গেলোনা? ঠিক তেমনি মাধ্যমিকেও জাতীয়করণ করেন দেখবেন শোঁ শোঁ করে মাধ্যমিকেও জয়েন করতেছে।কথায় তো আর চিঁড়ে ভিজেনা ভাই,এই জ্ঞানটুকুও কি আমাকে দিতে আপনাদের? আর হে জেনে রাখবেন মেধাবী শিক্ষক ব্যতীত মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরী হয়না,অতএব জাতীয়করণে আর তিন সেকেন্ড কাল বিলম্ব নয়।অতি দ্রুত বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণের আওতায় নিয়ে আসুন।

ছয়. লুটপাট ও শিক্ষক মারামারি রুখতে

না বলেও পারছিনা।বিষয়টা এখন ওপেন সিক্রেট।অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাণে লক্ষ লক্ষ টাকা থাকে।আর এই টাকা লুটপাটের ধান্ধায় নামে অনেক শিক্ষক।যেকারণে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠাণে হয় মারামারি,বিশৃঙ্খলা।তখন ঐ প্রতিষ্ঠাণে আর শিক্ষার পরিবেশ থাকেনা।চলে দলবাজি,তেলবাজির মহড়া।তাই এসব রুখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণগুলোর জাতীয়করণের বিকল্প নেই।

সাত. স্মার্ট শিক্ষক তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে

কথায় আছে পেটে খেলে পিঠে সয়।বর্তমান বাজার ব্যবস্থায় একটা সিঙ্গেল ফ্যামেলী চলতে যেখানে মিনিমাম ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দরকার হয় সেখানে ১২/১৩ হাজার টাকায় আপনারা গড়বেন স্মার্ট শিক্ষক! মাথা ঠিক আছে তো আপনাদের? এই পেটের ক্ষুধা তাড়িত শিক্ষকরা গড়বে স্মার্ট জাতি তথা স্মার্ট বাংলাদেশ ? টুটাল বিষয়টাই হাস্যকর।আসলে শিক্ষা নিয়ে আপনাদের উদ্যোগ গুলো সবই হাস্যকর।আচ্ছা আপনাদের প্রকৃত উদ্দেশ্যটা কি বলুন তো ? কিছুদিন আগে নতুন কারিকুলাম আনলেন,অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিখন পদ্ধতি শুরু করলেন।ভালো কথা।পদ্ধতিটাও একবারে মন্দ নয়। প্রশ্ন হলো, এই পদ্ধতি প্রসব করতে আপনারা লক্ষ লক্ষ ডলার ব্যয় করলেন। অথচ এই পদ্ধতি যারা বাস্তবায়ন করবেন তাদের জন্য কি বরাদ্ধ বিবেচনা করলেন ? তাহলে আপনাদের উদ্দেশ্য কি এই কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা নাকি কারিকুলাম, ফারিকুলামের নামে বরাদ্ধ বাড়িয়ে নিজেদের পকেট ভারী করা! দেশে এখন এমন আমজনতা কেউ আর আছে যে আপনাদের এসব পকেট ভারীর ফন্দিফিকির বুঝেনা ? জেনে রাখুন,আপনাদের এসব দুর্ভিসন্ধি বুঝতে কারো আইনস্টান পর্যায়ের মেধা থাকা লাগে না ? অতএব সময় থাকতে সাবধান হোন।

তাই আপনাদের কাছে বিশেষ অনুরোধ, আর যাই করেন প্লিজ অন্তত দেশের সকল বিদ্যালয়গুলো সরকারি তথা জাতীয়করণ করে দেশের শিক্ষাটাকে বাঁচান।এই অভাগা দেশটাকে একটু মায়া করুন।জাতির পিতার স্বপ্নের দেশটাকে এইভাবে ধ্বংস করবেন না।শেষে পস্তালেও কেউ কিছু করতে পারবেনা।সময় থাকতেই বিষয়গুলো অনুধাবন করুন।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল অনুরোধ, শিক্ষা বাঁচাতে অনতিবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণগুলো জাতীয়করণ করুন। তাহলেই স্মার্ট জাতি তথা স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হবে অচিরেই।

লেখক

জীবন কৃষ্ণ সরকার
কবি ও প্রাবন্ধিক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে