শিক্ষক নয় সিরাজ উদ্দিন আহমদ নিজেই ছিলেন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ-জীবন কৃষ্ণ সরকার।।সিরাজ উদ্দিন আহমদ।।Siraj Uddin Ahmed।।

0
333

শিক্ষক নয় সিরাজ উদ্দিন আহমদ নিজেই ছিলেন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ

যুগে যুগে এমন কিছু মানুষ জন্মায় যাদের পদাঙ্ক অনুসরণ, অনুকরণ করে একটি সমাজ তথা সম্প্রদায় এগিয়ে যায় বহুদূর,যাদের আদর্শ বুকে ধারণ করে নিয়ত পথ চলে হাজারো প্রাণ।এমনই একজন আদর্শিক মানুষ, সর্বজন শ্রদ্ধেয় গুরুজন ছিলেন সদ্য প্রয়াত বংশীকুন্ডা মমিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক,লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জনাব সিরাজ উদ্দিন আহমদ স্যার।তিনি একদিকে যেমন ছিল সৎ,আদর্বান শিক্ষক অপর দিকে ছিলেন কর্তব্য পরায়ণ একজন আলোকবর্তিকা।জীবনের কিঞ্চিত পরিমাণ সময় ডিউটির বাহিরে ব্যায় করেননি,এর প্রমাণ মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ’র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

আমার দেখা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দিন স্যার

আমার জীবনে পড়ালেখা জুটার কথা নয়।নুন আনতে পানতা পুড়োয় এমন একটি পরিবারে জন্ম নেয়া সন্তান হিসেবে পড়ালেখা থাক দূরের কথা বেঁচে থাকার অধিকারই প্রাই নেই বললেই চলে।অথচ স্যার আমাকে পুরো হাই স্কুল জীবন বেতন মওকুফ করে দিয়ে ছিলেন।যার দরুন দুই দফা পড়ালেখা ছাড়ার নিয়ত করেও ছাড়তে পারিনি।ছাত্রজীবনে কঠোর পরিশ্রমের দীক্ষাটাও পেয়েছিলাম প্রিয় স্যারের কাছ থেকেই।প্রচন্ড বৃষ্টির দিনে সকল ছাত্র যখন স্কুল কামাই করতো বা করার চিন্তা করতো ঠিক তখনই মনে হয়ে যেতো প্রিয় স্যারের কথা।এমনই এক বৃষ্টির দিন, মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল সেদিন।চারদিকে প্রায় অন্ধকার দেখছিলাম।গ্রামের সকল ছাত্ররা স্কুলে যাবার নিয়ত বাতিল করলো।হঠাৎ স্যারের কথা মনে হলো।কেউ না আসলেও প্রিয় সিরাজ উদ্দিন স্যার স্কুলে আসবেনই।স্যার আসলে আমাকে স্যার খোঁজবেনই।তাই আর তিল পরিমান সময় ক্ষেপন করলামনা সিদ্ধান্ত নিতে।বাবাকে নিয়ে জুঙ্গুর(হাওর এলাকার বৃষ্টিরোধক বস্তু বিশেষ) মাথায় দিয়ে রওয়ানা হলাম।প্রায় আধা ঘন্টা পর বংশীকুন্ডা মমিন উচ্চ বিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিদ্যাপীঠে পৌছলাম।পৌছতেই দেখলাম,যেই কথা,সেই কাজ।স্যার কেবল একাই এসেছেন,স্কুলে,দেখলাম স্যার বসে নেই,অফিসের কাজে ব্যাস্ত।আমাকে দেখেই স্যার মুচকি হাসি দিয়ে বললেন কিরে জীবন এমন দিনে তুই কি করে স্কুলে এলি,সারা স্কুল খালি।আমি বল্লাম স্যার কেবল আপনার সাথে দেখা হবে সেই ভেবে ঘরে বসে থাকতে পারিনি।তখনই স্যার আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো এই না হলে তুই আমার ছাত্র।সাব্বাস বেটা।জীবনে তোদের মতো ছেলেরাই প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে তিনি আমার কর্মপ্রেরণার আদর্শ।এই দিনটি আমি আজো ভুলিনি।স্যারের আদর্শকে বুকে ধারণ করেই আমি শিক্ষকতা পেশাকে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করি এবং প্রতিনিয়ত ডিউটিকে জীবনের পাথেয় মনে করে চলার চেষ্টা করছি।অল্প কিছুদিনের জন্য লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল এই মহান মানুষটির কলিগ হওয়ার।এই জন্য আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।কলিগ থাকাকালীন অনেক কিছু শেখার সৌভাগ্য হয়েছিল যা এখন আমার কর্মজীবনে কাজে আসছে বারবার।
ছাত্রীবনে অনেকবার স্যার আমাকে ফোন দিতেন,খোঁজ খবর নিতেন যা আমাকে স্যারের কাছে চিরঋণী করে রেখেছে।স্যারের কাছ থেকে অনেক শিখার ছিল যা লিখলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠায়ও শেষ হবেনা।তাই আমার কাছে তিনি কেবল শিক্ষক নন, তিনি নিজেই একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,যাকে চর্চা করে হাজারো শিক্ষার্থী পেয়েছে পথের দিশা, হয়ে উঠেছে কর্মবীর,আমি পেয়েছি বার বার তৃপ্তি।

তাই স্যারের মৃত্যুর সংবাদ শোনে আজ বড়ো মর্মাহত।আজ আমার মতো হতভাগ্য আর কেউ নেই।মনে হলো যেনো এক অভিভাবককে হারালাম চিরদিনের মতো।বিধাতার দেয়া কষ্টকে বরণ করা ছাড়া উপায় নেই।তাই শোক কে শক্তিতে পরিনত করে চলতে চাই,স্যারের আদর্শকে বাস্তবায়নে আরো মনোযোগী হতে চাই।তাই প্রিয় জীবনে কোন ভুল করে থাকলে প্রিয় স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।সেই সাথে স্যারের বিদেহী আত্মার চির শান্তি কামনা করছি।স্যার বেহেস্ত নসীব হোন,এটাই আমরা সকল শিক্ষার্থীদের একমাত্র চাওয়া।

পরিশেষে, হাওরের সাহিত্য সামাজিক সংগঠন “হাসুস বাংলাদেশ” এর পক্ষে আমি নিম্নোক্ত দাবিটি উত্তাপন করে আমার লেখাটি শেষ করছি।

জনাব সিরাজ উদ্দিন আহমদ স্যার শিক্ষার জন্য,শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণের জন্য আমৃত্যু কাজ করে গেছেন যা অস্বীকারের কোন সুযোগ নেই।কর্মী জীবনে বংশীকুন্ডা মমিন উচ্চ বিদ্যালয়,লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ দাতিয়াপাড়ায় প্রতিষ্ঠাণ প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত সুনামের সাথে।এলাকার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কলেজ “বংশীকুন্ডা কলেজ”।কলেজটির প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও রয়েছে স্যারের বিস্তর ভূমিকা,বাস্তবায়ন কমিটির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।কাজেই তিনটি প্রতিষ্ঠানই স্যারের ঋণ পরিশোধ করতে পারবেনা কোনদিনই।তাই আজকের এই দিনে হাসুস বাংলাদেশ’র পক্ষ থেকে জোর দাবি, তিনটি প্রতিষ্ঠানেই যেনো একটি করে হল’র(শিক্ষাভবন) নামকরণ প্রিয় স্যারের নামে নামকরণ করা হয়।আশা করি প্রতিটি প্রতিষ্ঠাণের সংশ্লিষ্ঠ কর্তাব্যক্তিগণ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন এই আশাটুকু রেখেই আমার লোখাটি এখানেই শেষ করছি।আবার স্যারের আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি,এবং স্যারের জন্য দোয়া/আশীর্বাদ কামনা করছি।

লেখক
জীবন কৃষ্ণ সরকার
কবি,প্রবান্ধিক,সম্পাদক,হাওরপিডিয়া।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে