আরকুম শাহ
(১৮৭৭-১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ)
প্রখ্যাত বাউল কবি ও শিল্পী।
১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে সিলেট জেলার দক্ষিণ ধার খিত্তা পরগণার ধরাধরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকে তিনি বাউল দর্শনে অনুপ্রাণিত হন। তিনি শাহ আবদুল লতিফ নামক একজন পীরের কাছে দীক্ষা নেন। কথিত আছে এই পীরের কাছে তিনি বাতেনি-মারাফতের জ্ঞান লাভ করেছিলেন।
তবে বাউল গানের পাশাপাশি অন্যান্য নানা ধরনের গান রচনা করে সিলেট অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর একমাত্র গানের সংকলন ‘হকিকতে সিতারা’ প্রকাশিত হয়। এক সময় তাঁর রচিত ‘কৃষ্ণ আইলো রাধার কুঞ্জে, ফুলে পাইলা ভ্রমরা/ময়ুর বেশেতে সাইজন রাধিকা’ গানটি অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
প্রতি বছর হযরত আরকুম আলী’র ভক্তেরা দক্ষিণ সুরমার ধরাধরপুর গ্রামে তাঁর মাজারে সমবেত হয়। প্রতি বছরই ওরশ পালিত হয়।
প্রতিদিনের সংবাদ ডটকম থেকে নিচের অংশটুকু তোলে ধরা হলো
মরমি গানের মহান সাধক আরকুম শাহ (১৮৫১-১৯৪১)। উনিশ ও বিশ শতক আলোকিত করেছেন তার রচিত গান ও কবিতা দিয়ে। তিনি একজন উঁচুমানের সাধক ছিলেন। সংগীত তার সাধনার অঙ্গ। কিন্তু কবি কেবল আধ্যাত্মিক জগতের বাসিন্দাই ছিলেন না। সমকালীন সমাজ ও জগতকেও তিনি দেখেছেন ‘চোখের আলোয়’ ‘চোখের বাহিরে’। তিনি অন্তরেও দেখেছেন ‘যখন আলোক নাহি রে’। একজন কবি তো সর্বদাই অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী। আমরা যা দেখেও দেখি না, তারা তা পরোক্ষ করেন। এজন্য আরকুম শাহ কেবল আধ্যাত্মিক গান রচনা করেই তার দায়িত্ব ও কর্তব্য শেষ করেননি। তিনি সমকালীন বিষয় নিয়ে লিখেছেন তিনটি ভট্ট কবিতা- ‘নিরানব্বই সনের গিরাইর কবিতা’, ‘ভ‚মিকম্পের কবিতা’ এবং ‘ভ‚মিকম্পের শেষ ফল কবিতা’। এসব কবিতাকে ‘পথুয়া কবিতা’ও বলে। মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন সাহিত্যরতœ ‘শ্রীহট্ট সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা’য় তার কবিতা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তার কাব্যগ্রন্থ তিনটি এবং গীতিগ্রন্থ ‘হকিকতে সিতারা’-এর একাধিক মুদ্রণ তার জীবদ্দশায়ই হয়েছিল। এরপরেও বর্তমানে তিনি যতটা আলোচিত ও প্রচারিত হওয়ার কথা, ততটা হননি। সাম্প্রতিককালে তার সম্পর্কে দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তা পাঠকের তৃপ্তিদান করতে সম্পূর্ণ সফল হয়নি। এই অপূর্ণতা ও অসম্পূর্ণতা দূরীকরণে এগিয়ে এসেছেন একজন স্বাধীন গবেষক সৈয়দা আঁখি হক। তার দীর্ঘদিনের সাধনার ফসল ‘আরকুম শাহ : জীবনদর্শন ও গীতিবিশ্ব’ শীর্ষক ৪৩২ পৃষ্ঠার মেধাবী গ্রন্থ।
গ্রন্থের ভ‚মিকা লিখেছেন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর প্রখ্যাত গবেষক ড. আবুল আহসান চৌধুরী। তিনি যথার্থই লিখেছেন, ‘আঁখি হক বয়সে নবীনা, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সারস্বত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত নন, শুধু ঐতিহ্য প্রেমে উদ্বুদ্ধ ও মরমি সংগীতের প্রতি অনুরক্ত হয়ে এই দুরূহ ও শ্রমসাধ্য কাজে হাত দিয়েছেন। তাই রীতি পদ্ধতিগত গবেষণা নিদর্শন হিসেবে নয়, মরমি সাহিত্যের এক একনিষ্ঠ প্রেমী হিসেবে তার এই কাজকে বিচার করতে হবে।’ এর চেয়ে সুন্দর মন্তব্য আর হতে পারে না। গ্রন্থের পরিচায়িকা লিখেছেন বাংলা একাডেমির অন্যতম উপ-পরিচালক বিশিষ্ট কবি, গীতিকার ও গবেষক ড. তপন বাগচী। তার এই বক্তব্যের সঙ্গে ‘প্রকৃত পেশাদার গবেষকদের মতোই তার এই স্বনিষ্ঠ অনুসন্ধান আমাদের মুগ্ধ করে। আরকুম শাহের প্রতি ভক্তি থাকলেই চলে না, গবেষণার যোগ্যতা থাকতে হয়, এই গবেষক সেই প্রতিশ্রæতির ছাপ রাখলেন।’ আমরাও একমত।
সৈয়দা আঁখি হক দীর্ঘদিন ধরে আরকুম শাহ সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছেন। তথ্য সংগ্রহ করতে কেবল ধরাধরপুরে নয়, আরকুম শাহর বিচরণক্ষেত্র, তার শিষ্য, প্রশিষ্য, অনুশিষ্য, তাদের অনুসন্ধান করে বের করেছেন এবং অনেক অজানা তথ্য, প্রায় বিলুপ্ত তথ্য সংগ্রহ করে আলোর মুখ দেখিয়েছেন। যেসব তথ্য হারিয়ে যাচ্ছিল তা তুলে আনা আঁখির ধৈর্য, নিষ্ঠা ও ঐকান্তিক প্রশংসার দাবিদার।
আরকুম শাহের ইন্তেকালের ৭৫ বছর পর এসব তথ্য খুঁজে পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। বৃত্তিপ্রাপ্ত ও ডিগ্রি লাভে কর্মরত গবেষকদের পক্ষেও যে কাজ করা দুরূহ, সেই কাজ আঁখি করলেন কোনো সারস্বত প্রতিষ্ঠান বা গবেষণা নির্দেশকের সাহায্য ছাড়া। এটা খুবই বিস্ময়ের ব্যাপার। অবশ্য স্বাধীন গবেষকের দ্বারা এর আগেও এ ধরনের মূল্যবান কাজ হয়েছে। সেই নির্মাণত্বে একটি নতুন পুষ্প সংযোজিত হলো- যার নাম সৈয়দা আঁখি হক।
‘আরকুম শাহ : জীবনদর্শন ও গীতিবিশ্ব’ গ্রন্থে আছে পাঁচটি অধ্যায় ও পরিশিষ্ট। এ ছাড়া গ্রন্থের শুরুতে আছে আরেকটি অধ্যায় ‘প্রবেশক’। এই অংশে আঁখি আলোচনা করেছেন আরকুম শাহ সম্পর্কে তার গবেষণায় আকৃষ্ট হওয়ার নেপথ্য কথা। বাণী, সুর ও সংগীত সম্পর্কে আলোচনা করে তিনি আরকুম শাহের মর্মলোকে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। তিনি যথার্থই লিখেছেন, ‘আরকুম শাহ শাস্ত্রজ্ঞ হয়েও শাস্ত্রবাদী ছিলেন না, বরং নিজেকে সত্যের সন্ধানে উৎসর্গ করেছিলেন এই আধ্যাত্মবাদী সাধক। সমাজে ধর্মের নামে অধর্ম, আর অন্যায়ের শোষণে যারা লিপ্ত ছিল, তাদের কর্মকে ঘৃণা করতেন তিনি। এদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করতে গিয়ে গান রচনা করেছেন। কখনো অন্যায়, অধর্মের সঙ্গে আপোস তো করেননি বরং একজন সত্যিকারের মোমিন হিসেবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্বিধাহীনভাবে কথা বলেছেন। হীন প্রকৃতির লোকদের উদ্দেশে কল্যাণের কথা বলেছেন, সুপথে ডাক দিয়েছেন পথভোলাদের।’ আঁখি আলোচনা করেছেন গানের সুর ও শব্দের ব্যবহার নিয়ে।
আরকুম শাহের প্রথম গ্রন্থ ‘হকিকতে সিতারা’ প্রকাশ সম্পর্কে আলোচনাসহ মূল্যবান তথ্য দিয়েছেন। ২০১১ সাল পর্যন্ত এই গ্রন্থটি আটবার পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। প্রথমে প্রকাশিত হয়েছিল সিলেটি নাগরী লিপিতে। পরে বাংলা লিপিতে মুদ্রিত হয়েছে আটবার। ফলে শব্দের বিকৃতি ছাড়াও আরকুম শাহের মুরিদ মেহেরজানের দুটি গান ‘হকিকতে সিতারা’তে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কোনো উল্লেখ ছাড়াই। আঁখি ২০১১ সালে আরকুম শাহের জীবনী ও সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। ছয় বছর সাধনার পর ২০১৭ সালে তার গ্রন্থ প্রকাশিত হলো। ১৩৪৩ বঙ্গাব্দে ‘হকিকতে সিতারা’ আরকুম শাহের জীবদ্দশায় প্রথম প্রকাশিত হয়। তখন এতে গান ছিল ৯৪টি। সর্বশেষ সংস্করণে প্রকাশিত গানের সংখ্যা ১১০টি। এ ছাড়া আঁখি সংগ্রহ করেছেন আরো ১৫টি অগ্রন্থিত গান। ফলে তার গ্রন্থে গীতিসংখ্যা ১২৫টি। তিনটি ভাট কবিতা মিলিয়ে ১২৮টি। বিভিন্ন সংস্করণে শব্দের বিকৃতি ও বিচ্যুতি ঘটেছে। আঁখি তুলনামূলক বিচারে সঠিক শব্দ নিধারণের চেষ্টা করেছেন। তিনি কীভাবে অনুসন্ধান করেছেন, কোথায় কোথায় গেছেন, কোন কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করেছেন তার বিবরণ দিতে কার্পণ্য করেননি। আরকুম শাহের কয়েকজন শিষ্যকে তিনি খুঁজে পেয়েছেন যাদের বয়স ৯০-৯৫ বছর। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আঁখি অনেক অজানা তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আরকুম শাহের জীবনী, দর্শন, সংগ্রহকৃত রচনাবলি, কিছু তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যেটুকু অধ্যয়ন ও অনুসন্ধান করেছি আলোকচিত্রসহ ক্ষণজন্মা এই কবির জীবন ও কর্মের যৎকিঞ্চিৎ পরিচয় পাঠক সমাজে তুলে ধরার প্রয়াসে আরকুম শাহরে জীবনীগ্রন্থ প্রণয়নের ও প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি।’
মূল গ্রন্থের প্রথম অধ্যায় ‘সুফিবাদ ও আরকুম শাহ’। এই অধ্যায়ে আঁখি সুফিবাদের উদ্ভব, ক্রমবিকাশ, সুফি শব্দের উৎপত্তির ইতিহাস, সুফিবাদের চারটি স্তর-শরিয়ত, তরিকত, মারেফাত ও হকিকত, মরমিবাদ, সুফিদের মূলনীতি, সুফিদের বিভিন্ন তরিকা-কাদেরিয়া, মাজাদ্দেদিয়া, চিশতিয়াও নকশাবন্দিয়া-সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে ‘আরকুম শাহের জীবনকথা’। এ অধ্যায়ে আঁখি প্রসঙ্গক্রমে সিলেটের নামকরণ, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা, ধরাধরপুর গ্রামের নামকরণ, আরকুম শাহর জন্ম, শৈশব, কৈশোর, সংসার জীবন, প্রথম মুর্শিদ মাওলানা শাহ আবদুল লতিফ, জীবিকার সন্ধান, আরকুম শাহর সহচর, মানবগুরু, পরমগুরু, ভাবনাচিন্তার উদয়, সন্তান, সংগীত জীবন, মুর্শিদের ইন্তেকাল, পোশাক পরিচ্ছদ, অধ্যাত্ম সাধনা, দেহতত্ত¡, প্রেমতত্ত¡, পার্থিব প্রেম বা জাগতিক প্রেম, অপার্থিব প্রেম বা আধ্যাত্মিক প্রেম, খাজা বাবার শান, প্রেমিক আরকুম, আহাদ-আহমদ তত্ত¡, নবির শান, হাসন রাজা ও আরকুম শাহ, আনাল হক, অলীরূপে ও কাফির রূপে আনাল হক, মৃত্যু ভাবনা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, গীত ও সুর, প্রথম গ্রন্থ ‘হকিকতে সিতারা’, আরকুম শাহের গুরু, আরকুম শাহর শিষ্য, পারলৌকিক চিন্তা, আখেরাত, চিরবিদায় লগ্নে আরকুম শাহ, চিরনিদ্রায় শায়িত আরকুম শাহ, মাজার, ওরস, আরকুম শাহর হাউলি, তথ্য সংগ্রহের স্থান, শ্রæতিও স্মৃতিতে আরকুম শাহ, মুরিদ, মাজারে আরকুম শাহের গান, আরকুম শাহর গানের শিল্পী, আরকুম শাহ শিল্পী গোষ্ঠী এবং প্রথম স্মরণিকা।
এই তালিকা প্রমাণ করে আঁখি কত পরিশ্রম করে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহের আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন এবং নিপুণ শিল্পীর তুলিতে তা বিশ্লেষণ করেছেন। আরকুম শাহের জীবন সম্পর্কে এমন পূর্ণাঙ্গ তথ্য এর আগে প্রকাশিত হয়নি। কবির প্রয়াণের অর্ধশতাব্দীরও বেশি পরে এই তথ্য অনুসন্ধান করা সংগ্রহ করা সুকঠিন কাজ। সাহসী যোদ্ধার মতো আঁখি আত্মপ্রত্যয় নিয়ে এ কাজে ব্রতী হয়েছেন, কাজ করেছেন এবং বলাবাহুল্য এ কাজে তিনি সফল হয়েছেন। ইতিহাসের ধূসর পান্ডুলিপি থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে আনা গবেষকের কাজ। শৌখিন গবেষক সৈয়দা আঁখি হকের এই কাজের সাফল্য পেশাজীবী গবেষককেও বিস্মিত করবে। নির্লিপ্ত ও নিরাসক্তভাবে তিনি আরকুম শাহের মানস বিশ্লেষণ করেছেন। এখানেই তিনি ধন্যাতিধন্য।
গ্রন্থের তৃতীয় অধ্যায় ‘আরকুম শাহ : সমকালীন প্রতিক্রিয়া’। এই অধ্যায়ে আরকুম শাহ সম্পর্কে ৪৪ জন লেখকের মন্তব্য সংকলিত হয়েছে। লেখকদের নাম বাংলা বর্ণমালার ক্রম অনুসারে সাজানো হয়েছে। যাদের মন্তব্য সংকলিত হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ড. আবদুল ওয়াহাব, ড. আবুল আহসান, ড. আশরাফ সিদ্দিকী, ড. এস এম গোলাম কাদির, ড. খন্দকার রিয়াজুল হক, গুরুসদয় দত্ত, জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, ড. তপন বাগচী, মুহম্মদ আসাদ্দর আলী, ড. মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী, ড. মোহাম্মদ সাদিক, অধ্যাপক যতীন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য প্রমুখ।
গ্রন্থের চতুর্থ অধ্যায় ‘শিষ্যের বিচারে আরকুম শাহ’। আঁখি লিখেছেন, ‘আরকুম শাহ লক্ষাধিক শিষ্য রেখে গেছেন। তার ভক্ত শিষ্য ও মুরিদগণ তাদের নিজস্ব উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতা থেকে নানারূপে আরকুম শাহকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছেন তাদের রচিত গানের মধ্য দিয়ে।’
যারা গানের মধ্য দিয়ে আরকুম শাহকে স্মরণ করেছেন তারা হলেন- রকীব শাহ, মৌলবি শাহ আবদুর রহমান চিশতী নিজামী, হজরত সুফি সৈয়দ তৈমুছ শাহ এবং আম্বর আলী। সংকলিত গানের সংখ্যা ২৬টি। প্রতিটি গান মুদ্রিত গ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে। বলাবাহুল্য এই তথ্য সংগ্রহে আঁখির নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও পরিশ্রম প্রশংসার দাবিদার।
গ্রন্থের পঞ্চম অধ্যায় ‘আরকুম শাহের গীতিবিশ্ব’। এই অংশে আরকুম শাহের অগ্রন্থিত গান প্রসঙ্গে আঁখি আলোচনা করেছেন এবং গানের বর্ণনামূলক তালিকাও সংযোজিত করেছেন। ‘হকিকতে সিতারা’ গ্রন্থ থেকে ১১০টি গান ও অগ্রন্থিত ১৫টি গানসহ কবিনামা ‘নিরান্নব্বই সনের গিরাইর কবিতা’, ‘ভ‚মিকম্পের কবিতা ও ‘ভ‚মিকম্পের শেষফল কবিতা’ গ্রন্থিত হয়েছে। গানের সঙ্গে সঙ্গে আঞ্চলিক শব্দের অর্থ ও সংযোজিত হয়েছে। কবিনামা অংশের তিনটি কবিতার টীকা ও শব্দার্থ গ্রন্থিত করে আঁখি পাঠকের সুবিধা করে দিয়েছেন। আর এ কাজটিও তিনি করেছেন পরম মমতায়।
পরিশিষ্ট অংশে আরকুম শাহের জনপ্রিয় পাঁচটি গানের জাপানি ভাষায় অনুবাদ সংযোজিত হয়েছে। গানগুলো বাংলা থেকে জাপানি ভাষায় সরাসরি অনুবাদ করেছেন জাপান প্রবাসী ড. আরশাদ উল্লাহ। লন্ডনে আরকুম শাহর গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। কয়েকটি গানের ইংরেজি অনুবাদ গ্রন্থে থাকলে ভালো হতো।
পরিশিষ্ট অংশে আরকুম শাহর গানে ব্যবহৃত ফারসি, আরবি, সংস্কৃত, হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি, তুর্কির সিলেটের আঞ্চলিক শব্দের তালিকা ও সেগুলোর প্রমিত বাংলা রূপ দেখানো হয়েছে। সহায়ক গ্রন্থপঞ্জিতে ৪৭টি গ্রন্থের উল্লেখ আছে। গ্রন্থের শেষাংশে সংযোজিত হয়েছে প্রাসঙ্গিক ৪৬টি আলোকচিত্র।