পর্যটন বিনিয়োগই হতে পারে মধ্যনগরবাসীর কপাল খোলার অন্যতম চাবিকাটি

0
220

পর্যটন বিনিয়োগই হতে পারে মধ্যনগরবাসীর কপাল খোলার অন্যতম চাবিকাটি- হাওরকবি

“বর্ষায় নাও হেমন্তে পাও” হাওরবাসীর জন্য বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ।বলার অপেক্ষা রাখেনা অনেকটা অবহেলা অর্থেই হাওর এলাকায় এই প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।সময়ের বিবর্তনে অনেক রাগ,ক্ষোভ,দুঃখ, বিষাদ মিশ্রিত প্রবাদটিই সাপে বরে পরিনত হতে চলেছে সাম্প্রতিক সময়ে বহুল প্রত্যাশিত মধ্যনগর উপজেলা ঘোষণার মধ্য দিয়ে।কেবল একটু তীক্ষ্ণ পরিকল্পনাই পারে অত্র এলাকায় আর্থিক বিপ্লব ঘটিয়ে দারিদ্রতাকে যাদুঘরে পাঠাতে।সেই সাথে নিমেষেই হাসি ফুটতে পারে লক্ষ মায়ের, লক্ষ ভাই বোনের মুখে।আর সেই পরিকল্পনাটি হচ্ছে পর্যটন খাতে বিনিয়োগ।প্রিয় পাঠক, তাহলে চলুন দেখে আসি মধ্যনগর উপজেলাবাসীর জন্য পর্যটন সম্ভাবনা কতটুকু।

এক. টাঙ্গুয়ার হাওর

টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক দৃশ্য সম্বলিত হিজল করচের অপূর্ব সম্মিলন।অপরুপ সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি আমাদের টাঙ্গুয়া।একদিকে যেমন মৎস সম্পদ অন্যদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দুদিক থেকেই টাঙ্গুয়া তার নিজস্বতা করে নিয়েছে সমগ্র বাংলাদেশ তথা বিশ্বের বুকে। টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রধান কারণ গাছগাছালি।এখানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২০০ প্রজাতির ও বেশি গাছালি রয়েছে।তন্মধ্যে হিজল, করচ সবচেয়ে বেশি।অন্যান্য গাছের মধ্যে বরুণ, পানিফল, হেলেঞ্চা, বনতুলসী, নলখাগড়া, বল্লুয়া, চাল্লিয়া, সিংড়া, শালুক, শাপলা, গুইজ্জাকাঁটা, উকল,রেইনট্রি,পদ্ম,বুনোগোলাপ ইত্যাদি।এসব গাছ-গাছড়া থেকে জ্বালানি কাঠ, আসবাব পত্র সহ গৃহসামগ্রী ও শৌখিন শোপিস তৈরির মাধ্যমে বিপুল অর্থ আয় করা যায়।
বর্ষাকালে নীলসাদা মেঘেদের সাথে প্রকৃতির ডাকে জেগে উঠে টাঙ্গুয়ার হাওর। টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম মিঠা পানির জলভুমির মধ্যে অন্যতম।পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। পাহাড় থেকে প্রায় ৩০টিরও বেশি ঝরনা এসে মিলিত হয়েছে টাঙ্গুয়ায়। টাঙ্গুয়ার স্বচ্ছ জলদেশে বাহারি প্রজাতির মাছের খেলা, হাওরের আকাশ জুড়ে রঙবেরঙের পাখিদের ভেসে থাকা আর এলাকা জুড়ে দৃষ্টি নন্দন উদ্ভিদের সারি টাঙ্গুয়ার হাওরকে করেছে বৈচিত্রময়।টাঙ্গুয়া হাওরের এই অপরুপ সৌন্দর্যের অবাধ বিচরন প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।

ইউনেস্কো টাঙ্গুয়ার হাওরকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দিয়েছে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের বিশেষত্বের কারণে। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট হিসেবে ২০ জানুয়ারী ২০০০ সালে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।

টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি অংশ হলো পাখি।এখানে নানা জাতের প্রায় ২০৮ প্রজাতির(পাখিশুমারী-২০১৯) পাখির সন্ধান পাওয়া যায়।
স্থানীয় জাতের পাখি ছাড়াও শীতকালে, সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আগত পরিযায়ী পাখিরও আবাস এই হাওর।পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে বিরল প্রজাতির প্যালাসেস ঈগল বড় আকারের গ্রে কিংস্টর্ক রয়েছে এই হাওরে। স্থানীয় জাতের মধ্যে শকুন, পানকৌড়ি, বেগুনি কালেম, ডাহুক, বালিহাঁস, গাঙচিল, বক, সারস, কাক, শঙ্খ চিল, পাতি কুট।
বিপন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি কুড়ুল (বাংলাদেশে এর নমুনাসংখ্যা ১০০টির মতো)। প্রতি বছরই টাঙ্গুয়ায় সমগ্র দেশের মধ্যে সবচেয়ে বিরল কয়েক জাতের পাখি দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে বৈকাল তিলিহাঁস, বেয়ারের ভুঁতিহাস এবং কালোলেজ জৌরালি (ইংরেজি: Black-tailed godwit)। বাংলাদেশে দৃশ্যমান আটটি বেয়ারের ভুঁতিহাসের পাঁচটিই পাওয়া গেছে টাঙ্গুয়ায়। বিরল প্রজাতির পাখিদের মধ্যে আরো আছে কালোপাখা টেঙ্গি, মোটাঠুঁটি ফাটানো, ইয়ার, মেটে রাজহাঁস, মাছমুরাল, লালবুক গুরগুরি, পাতি লালপা, গেওয়াল বাটান, লম্বা আঙুল চা পাখি, বড় গুটি ঈগল, বড় খোঁপা ডুবুরি, কালো গির্দি প্রভৃতি।

পাখি ছাড়াও কিছু সরিসৃপ এবং উভচর প্রাণীরাও টাঙ্গুয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ধক হিসেবে ভূমিকা রাখে।এদের মধ্যে ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০ প্রজাতির সাপ, বিরল প্রজাতির উভচর, ৪ প্রজাতির কচ্ছপ, ৭ প্রজাতির গিরগিটিসহ নানাবিধ প্রাণীর আবাস এই হাওরের জীববৈচিত্র্যকে করেছে ভরপুর। বিলুপ্ত কাছিমের মধ্যে রয়েছে হলুদ কাছিম, কড়ি কাইট্টা ইত্যাদি।(তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া,হাওরপিডিয়া)।বর্ষাকালে শত সহস্র পর্যটক সারা দেশ থেকে ভীড় জমায় এই অপরুপ টাঙ্গুয়া।আর এই টাঙ্গুয়ার ঠিক পশ্চিম পারেই অবস্থিত মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ও উত্তর ইউনিয়ন সদর।তাছাড়া এই টাঙ্গুয়ার বিরাট একটা অংশ কিন্তু মধ্যনগর উপজেলার অধীনেই।তাই কোন ভাবেই টাঙ্গুয়ার পর্যটনের অংশীদার থেকে মধ্যনগর কোন ক্রমেই বাদ পড়তে পারেনা।

দুই. নীলাদ্রী লেক

নীলাদ্রী লেক(শহিদ সিরাজ লেক), নীল পানির ফোয়ারা,ভারত সীমান্ত সংলগ্ন পাহাড়ের পাদেশ খ্যাত পিকনিক স্পটটি ইতোমধ্যেই বাংলার কাস্মীর হিসেবে পর্যটকদের কাছে পরিচিতি পেয়েছে।সারা বছরই এখানে পর্যটকদের আনাগোনা।হানিফ সংকেতের “ইত্যাদি” মঞ্চায়নই প্রমাণ করে স্পটটি পর্যকটকদের কাছে কতটুকুগুরুত্বপূর্ণ। উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য,পূর্ব দিকে পিকনিক স্পট বারেকের টিলা,শিমুল বাগান,দক্ষিনে টাঙ্গুয়ার হাওর,লেকটিকে আপন করে রেখেছে ছায়ার মতন।মেঘালয়ের মেঘোবরণ, লেকটিকে দিয়েছে আরো শ্যমল ছায়ার স্নিগ্ধরুপ।লেকের মায়াবী নীল পানি সহজেই কাছে টেনে নেয় নীলপিয়াসিদের।উত্তরে দাঁড়িয়ে রয়েছে আকাশচুম্বী পাহাড় ও তার পাথর শিলারা।তারাও দেখছে লেকের সৌন্দর্য মুগ্ধ হয়ে।পশ্চিমে রয়েছে কালো পাথরের পাহাড়।দেখলে পাথর গতর আঁকরে ধরতে মন চায় যে কারো।যেকোন সৌন্দর্য পিপাসু অন্তত ২০-৩০ মিনিট এসব শিলাখন্ডে বসে অজানা আপন ভূবনে হারিয়ে যেতে বাধ্য।পূর্ব পশ্চিমের উভয় পাড়েই রয়েছে পর্যটকদের জন্য বসার সুব্যাবস্থা।

টাঙ্গুয়ার হাওরের দক্ষিনা বাতাসে লেকের কলকল ধ্বনি যেনো বিনাবীনে সুর তুলে কথা বলে পর্যটকদের সাথে।হাওর এবং পাহাড় যেনো মাতৃগর্ভের ন্যায় যতনে রেখেছে এই লেকটিকে।তাই সত্যিই বলতেই হয় ”নীলাদ্রী লেকঃ সৌন্দর্য যেখানে স্বর্গ হতে নেমে এসেছে হাওরের এ ভূমে।” আর এই স্পটটির ছায়া অংশীদার কিন্তু মধ্যনগরবাসীই।কারন মহিষখলা এই স্পটটি ৩০/৪০ মিনিটের পথ।একটু সুষ্ঠু পরিকল্পনায় এগুলেই উক্ত লেকের পর্যটাকদের আপন করে নিতে পারি আমরা।

তিন. শিমুল বাগান

সারাদেশের দেশের পর্যটকদের দৃষ্টি কেঁড়েছে তাহিরপুরের মানিগাঁওের শিমুল বাগান।অনুসন্ধ্যানে জানা যায়,গত ১৫ বছর পূর্বে অর্থাৎ ২০০৩ সালের দিকে প্রায় ২৪০০ শতক জমিতে অনেকটা সৌখিনতার বশেই শিমুল বাগানটি গড়ে তুলেছিলেন জয়নাল আবেদীন নামে তৎকালীন স্থানীয় এক ধনাঢ্য ব্যাবসায়ী।প্রায় ৩০০০ শিমুল চারা রোপন করেছিলেন বৃক্ষপ্রেমী ও একসময়ের চেয়ারম্যান জনাব জয়নাল আবেদীন।কালক্রমে এখন তা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছে।বাগানের ভেতরে শিমুল গাছ ছাড়াও রয়েছে অগনিত লেবু গাছ যা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়।আর শিমুল গাছগুলো বসন্তে ফুলে ফুলে রক্তিম আভায় মুখরিত হয়।বিশাল পরিধির এই শিমুল বাগানটি দেখতে ইতোমধ্যেই সারাদেশ থেকে পর্যটকবৃন্দ এক সময়ের লাউড়ের গড় খ্যাত তাহিরপুরের উত্তর বরদলের দিকে পাড়ি জমাচ্ছেন নিয়ত।বসন্তের দুপুরে পাপড়ি গুলো রক্তিম আভায় পর্যটকদের মন রাঙ্গিয়ে হাত বাড়িয়ে কাছে ডেকে নেয় আপন মনে।শিমুলের শাখা-প্রশাখার দিকে খেয়াল করলেও মনে হয় যেনো হাত উড়িয়ে শিমুলদলেরা সৌন্দর্য পিয়াসীদের কাছে ডাকছে।ভ্রমণ পিপাসু মাত্রই এসব বৃক্ষরাণীদের প্রেমে পড়তে বাধ্য।তাই এখানেও প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসছে সারা দেশ থেকে।

চার. যাদুকাটা নদী এবং বারেকের টিলা

নান্দনিক সৌন্দর্য্যে ঘেরা যাদুকাটা নদী প্রতিদিন ভ্রমণে আসেন হাজার হাজার প্রকৃতি প্রেমিরা। সারাদিন নাচ গান হৈ হুল্লর,ছবি তোলা রাতে নিজেদের রান্না করা খাবার আর আনন্দের যেন অন্ত নেই। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত হতে কলেজ ও ভার্সিটির ছাত্রছাত্রীসহ ভ্রমণ পিপাসুদের নৌ-বিহারে প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠেছে যাদুকাটার বুক।
দর্শনার্থীদের কেউ মায়ার নদী কেউবা রুপের নদী বলে অভিহিত করেন এই নদীকে। বর্ষায় পাহাড়ি নদী যাদুকাটার বহমান স্রোতধারায় নিজেকে ভাসিয়ে দিতে ভীড় জমায় প্রকৃতি প্রেমিরা। আর হেমন্তে শুকিয়ে যাওয়া যাদুকাটার বুক জুড়ে ধূধূ বালুচরে প্রিয়জন নিয়ে হেঁটে চলা ও যাদুকাটার স্বচ্ছ পানিতে গা ভাসিয়ে দিয়ে পরমতৃপ্তি বোধ করেন পর্যটকরা। যাদুকাটা নদী থেকে হাত রাখলেই ছোঁয়া যায় শ্বাশত সবুজে ঘেরা বারেক টিলা। বারেক টিলায় ঘুরে ঘুরে যাদুকাটা নদীর প্রকৃত রুপ উপভোগ করা সম্ভব। বারেক টিলায় আদি বাসীদের একটি গ্রাম রয়েছে। সে গ্রামের নাম আনন্দনগর। সেই গ্রামের শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা সহজ সরল ও আপ্যায়ন প্রিয়। বারেকটিলার সবুজ বনায়ন ও চারপাশে নদী, পাহাড় ও হাওরের মনোরম দৃশ্যে মন হারিয়ে যায় ভ্রমণ প্রেমিদের। যাদুকাটা নদীর তীরঘেঁষে পূর্ব-উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সফরসঙ্গী হযরত শাহ আরেফিন (রহ) এর আস্তানা।পশ্চচিমে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যুগাবতার শ্রীচৈতন্য দেবের প্রধান পার্ষদ শ্রী অদৈত দেবের মন্দির। নান্দনিক সৌন্দর্য্যে ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিদিনই বিকালে পরিবার পরিজন নিয়ে সময় কাটাতে আসেন অনেকেই।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে টাঙ্গুয়ার হাওর এবং তৎ সংলগ্ন এলাকায় এক বিশাল পর্যটন ক্ষেত্র তৈরি হয়ে গেছে যা কারো আর অজানা নয়।এবার তাহলে চলুন দেখি কিভাবে পর্যটনে বিনিয়োগ করে আর্থিক বিপ্লব ঘটাতে পারে মধ্যনগরবাসী,মুক্তি পেতে পারে লক্ষ বেকার বেকারত্বের অভিসাপ থেকে।

১। আবাসনে বিনিয়োগ
সবচেয়ে বেশি লাভবান হওয়া যেতে পারে আবাসনে বিনিয়োগ করে।কারণ উক্ত স্পটগুলোতে ঢাকা সহ সারা দেশ থেকে আসতে সহজ রাস্তা হলো মোহনগঞ্জ হয়ে মধ্যনগর আসা অথবা কলমাকান্দা হয়ে বংশীকুন্ডা দক্ষিণ সদর অথবা মহিষখলা সদর আসা।কিভাবে তা একটু দূরত্বের পরি সংখ্যানটা দেখে আসি।প্রথমত কোন পর্যটক যদি ঢাকা থেকে উক্ত স্পটগুলোতে আসতে চায় তাহলে প্রথমেই ঢাকা থেকে সিলেট আসতে পাড়ি দিতে হবে ২৪৫ কিলোমিটার পথ।সিলেট টু সুনামগঞ্জ আরো ৭০ কিলোমিটার এবং স্পটে আসতে আরো ২০/২৫ কিলোমিটার।সব মিলিয়ে প্রায় ২৫০+৭০+২৫=৩৪৫ কিলোমিটার।অপর দিকে ঢাকা টু নেত্রকোনার দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার,নেত্রকোনা টু কলমাকান্দা ৪০ কিলোমিটার,কলমাকান্দা টু বংশীকুন্ডা সদর ৮ কিলোমিটার,মহিষখলা সদর ১৫ কিলোমিটার।সব মিলিয়ে বংশীকুন্ডা আসলে ১৬০+৪০+৮=২০৮ কিলোমিটার,মহিষখলা আসলে ২১৫ কিলোমিটার।অপর দিকে মধ্যনগর হয়ে আসলে নেত্রকোনা টু মোহনগঞ্জ ৩৫ কিলো,মোহনগঞ্জ টু ধর্মপাশা ৬ কিলোমিটার,ধর্মপাশা টু মধ্যনগর ২০ কিলোমিটার,মধ্যনগর টু দক্ষিণ বংশীকুন্ডা আসতে আরো ৭ কিলোমিটার।সব মিলিয়ে ১৬০+৩৫+৬+২০+৭=২২৮ কিলোমিটার।তাহলে মধ্যনগর হয়ে আসলে দূরত্বের পার্থক্য ৩৪৫-২২৮=১১৭ কিলোমিটার,কলমাকান্দা হয়ে দক্ষিণ বংশীকুন্ডা আসলে ৩৪৫-২০৮= ১৩৭ কিলোমিটার,মহিষখলা আসলে পার্থক্য ১৩০ কিলোমিটার।অর্থাৎ যে দিক থেকেই আসেননা কেন ১২০ থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার পথ কম লাগতেছে সুনামগঞ্জ থেকে মধ্যনগর, বংশীকুন্ডা হয়ে স্পটে আসতে যেকারনে আর্থিক খরচ ও বাঁচবে বহুগুণে।তাই ডিজিটাল যুগে শিক্ষিত পর্যটকদের কিন্তু উপরোক্ত হিসেবটা বুঝতে খুব বেশি একটা কষ্ট হবেনা এবং অযথা গাঁটের টাকা অতিরিক্ত খরচ করে সুনামগঞ্জমুখী না হয়ে কিন্তু মধ্যনগরমুখী তথা বংশীকুন্ডামুখীই হবে। তাহলে মধ্যনগর উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিরা যদি আবাসন প্রকল্পের দিকে একটু নজর দেন, পর্যটকরা যদি একটু আয়েশে নিরাপত্তার সহিত রাত্রি যাপন করতে পারেন তাহলে কিন্তু অত্র পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের সংখ্যাও বহুগুণে বাড়বে এবং রাত্রে আবাসিক হোটেল গুলোতে পর্যটকরাও রাত্রি যাপন করবে প্রচুর পরিমাণে।কারণ বংশীকুন্ডা থেকে পর্যটন স্পটগুলো কিন্তু খুব দূরে নয়।১০/১৫ কিলোমিটার যদি এড ও করা হয় তাহলেও কিন্তু ১০০ থেকে ১২০ কিলো ব্যবধান কিন্তু সুনামগঞ্জের সাথে বংশীকুন্ডার থেকেই যায়।তাই উক্ত খাতে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।

২. যানবাহন ক্রয়ে বিনিয়োগ

বর্ষাকালে ট্রলার, স্পীডবোটে টাঙ্গুয়া ভ্রমণে পর্যটকরা আসবে।তাই অত্র এলাকায় সাজোয়া নৌকা প্রস্তুত রাখতে পারলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে ভাড়া বাবদ ভালো একটা আয় করা যেতে পারে।আর এই আয়টা মধ্যনগরবাসীর জন্য বোনাস হিসেবে কাজ করবে।এলাকার অনেক বেকার লাভবান হয়ে দারিদ্র মুক্ত হতে পারবে।
সময় বাঁচানোর জন্য স্পীডবোট ব্যবহার করতে পারে পর্যটকরা।তাই ওটাতেও বিনিয়োগ করা যেতে পারে।

৩। যানবাহন ক্রয়ে বিনিয়োগ
বিভিন্ন ধরে যানবাহন যেমন রিক্সা,অটো,সিএনজি, মোটর সাইকেল ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।শুকনা মউসুমে এসব যানবাহনেই পর্যটকরা হাওরে যেতে চাইবে। তাই ওখান থেকেই মধ্যনগরবাসী টাকা কামাই করতে পারবে ঢেঁড় পরিমানে।

৪। হোটেল রেস্টুরেন্টে বিনিয়োগ
ভালো মানের হোটেল রেস্টুরেন্টে বিনিয়োগ করলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।কারণ বাহিরের পর্যটকরা সাধারনত মান সম্মত খাবার, নাস্তার ব্যাবস্থা পেলে তারা প্রচুর পরিমানে টাকা ব্যায় করে খাবার,নাস্তা খেতে পারে।তাই ওই সেক্টরে কাজ করে অনেকের বেকারত্বের অবসান ঘটাতে পারে।এইভাবেও অনেকে দ্রুত আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে।

৫। পর্যটক গাইড ট্রেনিং এ বিনিয়োগ

বাহির থেকে যখন পর্যটকরা হাওর দেখতে আসবে তখন তাদের অপরিচিত স্থানে প্রয়োজন হতে পারে পর্যটক গাইডের।তখন পূর্ব প্রশিক্ষিত কিছু সংখ্যক লোক কে পর্যটক গাইড হিসেবে প্রস্তুত রাখলে তারা এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে আর্থিক ভাবে লাভবান পাওয়ার সুযোগ পেতে পারে।

৬। বিলবোর্ডের মাধ্যমে পর্যটন সুবিধা সমূহ প্রচারে বিনিয়োগ

উপজেলা প্রশাশনের মাধ্যমে মধ্যনগর, বংশীকুন্ডা,মহিষখলা এই তিন জায়গার বিশেষ বিশেষ স্থানে বড় বিলবোর্ডের মাধ্যমে উক্ত পিকনিক স্পটগুলোর আকর্ষণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরতে পারলে এবং সুনামগঞ্জের চাইতে মধ্যনগর, বংশীকুন্ডা,মহিষখলা হয়ে হয়ে হাওরের আসার রাস্তার স্বল্পতা,তুলনামূলক আর্থিক ব্যয় হৃাসের ব্যাপারগুলো সঠিক ভাবে তুলে ধরতে পারলে বহুগুণে পর্যটক আগমন বেড়ে যাবে।ফলে এখান থেকে স্থানীয় জনগন বিপুল পরিমান টাকা উপার্জন করতে পারবে সেই সাথে উপজেলা প্রশাসন ও প্রচুর রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারবে যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

৭। দৃষ্টিনন্দন ইকো পার্ক তৈরীতে বিনিয়োগ

হাওরের কোন এক সুবিধাজনক স্থানে হাওরের বিভিন্ন প্রাকৃতিক জিনিস তুলে ধরার জন্য দৃষ্টিনন্দন ইকোপার্ক গড়ে তোলা যেতে পারে।সেখানে হাওরের বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি,বিরল প্রজাতির মাছ,প্রাণী, ঘাস বন সংগ্রহ করা যেতে পারে।এতে পর্যটক আকৃষ্ট হয়ে হাওরে আনাগুনা বাড়বে এবং বিপুল পরিমান অর্থ উপার্জন করা যাবে।

৮।দৃষ্টি নির্মাণ হাওরবিলাস কেন্দ্র নির্মাণে বিনিয়োগ

হাওর দর্শনের জন্য,হাওরের উন্মোক্ত রুপ অবলোকন,মুক্ত বাতাস অবগাহনের জন্য নির্মাণ করা যেতে পারে হাওর বিলাস কেন্দ্র নির্মাণ।এতে পর্যটকরা আকৃষ্ট হয়ে ঘন্টা হিসেবে ভাড়া নিতে পারে।এইভকবে এখান থেকেও প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যেতে পারে।

তাই সব দিক মিলিয়ে বলাই যায় পর্যটন বিনিয়োগই হতে পারে মধ্যনগরবাসীর জন্য কপাল খোলার অন্যতম চাবিকাটি।সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে একটু দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে পারলে অবশ্যই এই খাতে শতভাগ সফলতার আসতে পারে।পরিশেষে মধ্যনগরবাসীর জন্য শুভকামনা রেখে লেখাটি শেষ করছি।আবারো মধ্যনগরের উন্নয়ন বিষয়ক কোন ভালো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো।সে পর্যন্ত সুন্দর থাকুন, সুস্থ থাকুন,ভালো থাকুন সবাই।

লেখক
জীবন কৃষ্ণ সরকার
কবি,প্রাবন্ধিক,হাওর উন্নয়ন গবেষক
সম্পাদক,হাওরপিডিয়া,সভাপতি, হাসুস বাংলাদেশ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে