ড. গোলাম কাদির : ছিলটী আত্মার আজীবন অনুসন্ধানী
সৈয়দ মোস্তফা কামাল
তাঁর পুরো নাম এসএম গোলাম কাদির (১৯৩৩-২০১১ খ্রিস্টাব্দ)। পিতা মুহাম্মদ উমর আলী। মাতা বেগম বকাউল জাহান। জন্মস্থান- সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার চামরদানি গ্রামে। কর্মজীবনের সবটুকুই কেটেছে অধ্যাপনায়।
‘সিলেটী নাগরী লিপি ভাষা ও সাহিত্য’ গ্রন্থটি তাঁকে দেশে-বিদেশে সুনাম ও সুখ্যাতি দিয়েছে। সিলেটী নাগরী লিপি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণা গ্রন্থ লিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় থেকে তিনি প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। বাংলা একাডেমী ঢাকা তাঁর থিসিস প্রকাশ করে ১/১৯৯৯ খিস্টাব্দে।
… বাংলাভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, লিখন এবং পঠন-পাঠনে ব্যবহৃত শক্তিশালী দ্বিতীয় বর্ণমালা সিলেটী নাগরী লিপি। গৌড় বঙ্গের প্রাচ্য-প্রান্ত সিলেটের মতো স্থানে হিন্দুস্থানীয় আদলে এ অভিনব লিপিমালার প্রচলন এবং সেখানকার জনগোষ্ঠীর জীবনাচারে দীর্ঘকাল ধরে সে লিপির লালন সকলের কৌতূহল ও অনুসন্ধিৎসাকে অবশ্যই জাগ্রত করে।
: ভূমিকা: সিলেটী নাগরী লিপি: ভাষা ও সাহিত্য
সিলেটী নাগরী লিপি এবং এ লিপিতে রচিত সাহিত্য সিলেট বাসীর নিজস্ব সম্পদ। এ ঐতিহ্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে ড. গোলাম কাদিরের শ্রম ও ত্যাগের কথা জাতি অনাগতকাল শ্রদ্ধার সাথে ইয়াদ করবে। মনে রাখতে হবে, ঐতিহ্য জাতীয় জীবনে প্রেরণার উৎস। আত্মবিকাশের পাটাতন বা ভিত্তিভূমি। শিকড় দিয়ে গাছ মাটি থেকে রস গ্রহণ করে, পাতা দিয়ে আলো বাতাসের উপাদান সংগ্রহ করে বেড়ে উঠে। ঠিক তেমনিভাবে জাতি ও তার ঐতিহ্য থেকে প্রেরণা রস গ্রহণ করে সামনের দিকে সিনা টান করে এগিয়ে যায়। পৃথিবীতে অনেক ভাষা আছে যার নিজের কোনো লিপি বা বর্ণমালা নেই। ইংরেজী এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ভাষা। আসলে, ইংরেজী ভাষা লেখা হয় রোমান হরফে। শুধু ইংরেজী নয়, ইউরোপের অনেক ভাষা লেখা হয় রোমান হরফে। বহুল প্রচলিত উর্দুভাষারও নিজের কোন লিপি নেই। আরবী বর্ণমালার দ্বারা উর্দু লেখা হয়। এছাড়া ফার্সীভাষা মূলত আর্যভাষা। এ ভাষার চর্চা হয় সেমিটিক আরবী বর্ণমালার সাহায্যে। এসব তথ্য আমরা পাই ভাষা বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে।…
উৎস : ব্যাহত চিন্তা : ড. গোলাম কাদির \ ৫/২০০২ \ প্রষ্ঠা- ৬০।
সিলেট অঞ্চলে প্রায় তিনশ’ বছর নাগরী হরফে বা বর্ণমালা দিয়ে সাহিত্য চর্চা হয়েছে। নাগরী লিপির অক্ষর সংখ্যা ৩২টি। স্বরবর্ণ- ৫টি। স্বরচিহ্ন ৫টি। যুক্তাক্ষর ৩ থেকে ৫টি। সিলেটীরা সাহিত্য চর্চা করেছেন ছিলটী নাগরী লিপিতে। বাংলা বর্ণমালায় নয়। প্রকৃতপক্ষে সহজ-সরল হওয়ার কারণে তখন বাংলাভাষা পড়া লেখার জন্য বাংলা লিপির বিকল্প একটি সহজ-সরল বর্ণমালা উদ্ভাবনের প্রয়োজন হয়েছিল। খ্রিস্টীয় ষোল শতকে সিলেট অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক বাইরের লোক সিলেটে আসেন। তারা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। নিজেদের জানা লিপিমালার উপাদান নিয়ে তৈরি করেন সিলেটী নাগরী হরফ। এ লিপিতে প্রায় সোয়াশ’ পুস্তক-পুস্তিকা রচিত হয়েছে বলে গবেষকদের অভিমত। অন্যমতে খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতকে সিলেটী নাগরী লিপির উদ্ভাবন হয়।
ভারতবর্ষের ভাষার একটি জরিপ করেন স্যার জর্জ গ্রিয়ারসন। তিনিই প্রথম ছিলটী নাগরী বর্ণমালার কথা উল্লেখ করেন। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে সিলেট গেজেটিয়ার সম্পাদনা করেন মি. বিসি এ্যালেন। তিনিও ছিলটী নাগরী হরফের কথা উল্লেখ করেন। বিদেশী পন্ডিতদের পক্ষ ধরে ছিলটী নাগরী লিপি ও এ লিপিতে রচিত সাহিত্য বিষয়ে প্রাথমিকভাবে কিছু আলোচনা করেন শ্রী নগেন্দ্র নাথ বসু, ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, পদ্মনাথ ভট্টাচার্য, ড. সুকুমার সেন, ড. হাসান দানী, অধ্যাপক শিব প্রসন্ন লাহিরী, আশরাফ হোসেন সাহিত্যরত্ন, চৌধুরী গোলাম আকবর সাহিত্যভূষণ, অধ্যাপক মুহম্মদ আসাদ্দর আলী প্রমুখ লেখক গবেষকগণ। তবে বিস্তারিত তথ্যপোত্তসহ তাদের আলোচনায় তেমন একটা ফলপ্রসূ তথ্য পাওয়া যায়নি। ইত্যোমধ্যে অনেক মূল্যবান উপাদান নানা কারণে বিলুপ্ত হয়ে যায় সংরক্ষণের অভাবে।
সিলেটের এই গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে এগিয়ে আসেন গোলাম কাদির। তাঁর গবেষণা কর্মকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন, বিশ্বভারতী, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছিলটী নাগরী লিপিতে রচিত সাহিত্যকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। ১. রোমান্টিক ২. জীবনী ও জংনামা (যুদ্ধবিষয়ক) ৩. সূফীবাদ ও মারেফাত তত্ত্ব ৪. মুর্শিদী ও মারফতি গান বা রাগ-রাগিনী ৫. ইসলাম ধর্ম বিষয়ক।সিলেট একটি প্রাচীন জনপদ। অতীতে অনেকবার সিলেটের মানচিত্র রদবদল হয়েছে। প্রাচীন সিলেটের সীমা-চৌহদ্দি হিসেবে বলা হয়েছে:উত্তরে কামরূপ রাজ্য। দক্ষিণে সমতট রাজ্য। পূর্বে হেড়েম্ব রাজ্য (কাছাড়)। পশ্চিমে পুন্তুবর্ধন রাজ্য। উৎস \ সিলেট নাগরীর পহেলা কেতাব \ ও দই খুরার রাগ\ ড. অনুরাধা চন্দ\ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়\ ভারত\ দে’জ পাবলিশিং\ কলকাতা\ ৯/২০০৬ খ্রিস্টাব্দ।আগেই উল্লেখ করা হয়েছে ছিলটী নাগরী বর্ণমালা বাংলা বর্ণমালার থেকে অনেক সরল। একটি ধ্বনির জন্য একটি হরফ এ নিয়মটি ছিলটী নাগরী সাহিত্যে কাজ করেছে বলে মনে করা হয়।
সিলেটী নাগরী লিপিতে রচিত সাহিত্য সাধারণত পদ্য, পয়ার, ত্রিপদীতে লেখা হতো। এ লিপি উদ্ভাবনের কারণ হিসেবে মনে করা হয় মুসলিম জনগণের মধ্যে ধর্মপ্রচার ও আত্মস্বাতন্ত্র্য রক্ষাই ছিল এ লিপি উদ্ভাবনের মূল কারণ।মুন্সী আশরাফ হোসেন সাহিত্যরত্ন পুরাতত্ত্ববিদ মনে করেন… ফুলের মতো সহজ সুন্দর আড়ম্বর বিহীন বলিয়া ঐ ভাষার নাম দেওয়া হয়েছে ফুল নাগরী।…দেখুন: সিলটের ইতিহাস \ ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ\ আশরাফ হোসেন সাহিত্যরত্ন।
সিলেটী নাগরী লিপিতে রচিত সাহিত্য বিষয়ে আলোচনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ লিপিতে রচিত সাহিত্য মূলত ইসলামধর্ম ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ সম্পর্কের ফসল।…উৎস: আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা : উত্তরাধিকার ও মুসলমানী নাগরী লিপি \ দেওয়ান নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী \ ২০০১ খ্রিস্টাব্দ\ প্রকাশক ড. মুমিনুল হক\ সেন্টার ফর বাংলাদেশ রিচার্স। প্রসঙ্গক্রমে সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে কিছুটা আলোচনার প্রয়োজন। সৈয়দ মোর্তাজা আলীর মতে: স্বাধীন সুলতানী আমলে (১৩৩৮-১৫৩৮) সম্ভবত গৌড়ের সুলতানের অনুমোদনক্রমে বা প্রত্যক্ষ নিয়োগে স্থানীয় শাসনকর্তা দ্বারা সিলেট (গৌড়, লাউড়, তরফ) এলাকা শাসিত হত। -সোনারগাঁওয়ের ১৪৭৪ সালের এক শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, মবারকদৌলা মালিকউদ্দিন তখন ইকলিমে মোয়াজ্জমাবাদের ও লাউড়ের উজিব্ ছিলেন।ইকলিমে মোয়াজ্জমাবাদ পূর্ব ময়মনসিংহ ও পশ্চিম সিলেটের ভাটি অঞ্চল নিয়ে বিস্তৃত ছিল।উৎস: সিলেটে মুসলিম শাসনের কালক্রম\ সৈয়দ মোর্তাজা আলী। বাংলা একাডেমী পত্রিকা\ শ্রাবন-আশ্বিন\ ১৩৭২ বাংলা।
সিলেটী নাগরী লিপিতে লিখিত সাহিত্যে কিছু কিছু পৌরাণিক রাধা-কৃষ্ণের রূপকও পাওয়া যায়। সৈয়দ শাহ নূর (র.), সূফী শিতালং (র.), আব্দুল ওহ্য়াব চেŠধুরী (র.), শেখভানু (র.), শাহ আছদ আলী (র.), আরকুম শাহ (র.), সৈয়দ জহুরুল হুসেন (র.), ভবানন্দ দীনসহ অনেকের লেখায় রাধা-কৃষ্ণ রূপক হিসেবে এসেছে। এবিষয়ে পরে আলোচনা করা হবে। বাংলাভাষার উদ্ভাবন কাল হতে সিলেটী নাগরী লিপি ছাড়া অন্য কোন লিপি দ্বারা এ ভাষা লিখন ও পঠন-পাঠনের কথা আমাদের জানা নেই। বলা যায়, সিলেটী নাগরীলিপি বিচ্ছিন্ন বা ব্যতিক্রমধর্মী কোন সৃষ্টি নয়। সময়ের প্রয়োজনে একটি এলাকার জনগোষ্ঠী এ লিপিমালার মাধ্যমে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করেছেন। বলা যায়, সিলেটী নাগরী লিপি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন।রাধা কৃষ্ণ বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করা প্রয়োজন। ড. মুহম্মদ এনামুল হক এ প্রসেঙ্গ চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে: এই যে রাধা, এইযে রাধা, এইযে কৃষ্ণ, এইযে যমুনা, এইযে বাঁশী ইহাদের সহিত পৌরাণিক রাধা কৃষ্ণের সম্বন্দ কোথায়? আরবের আল্লাহ্ যেনম পরেস্যে আসিয়া খোদা (সংস্কৃত ‘স্বাধা’ শব্দজাত) শব্দে পরিণত হইয়াছেন, পারস্যের সূফী কবিদের আশিক-মাশুক ও তেমনিভাবে বাংলায় আসিয়া রাধা-কৃষ্ণ নাম ধারণ করিয়াছেন। নাম দু’টি পৌরাণিক বটে, কিন্তু কাম সম্পূর্ণ পৃথক। কৃষ্ণের বংশী ধ্বনিকে অবলম্বন করিয়া বাঁশরী নীলা দেখাইবার জন্য যে বিরাট পদাবলী সাহিত্য রচিত হইয়াছে, তাহার মর্মার্থ মৌলানা রুমীর মসনবী শরীফের সুবিখ্যাত ‘বাঁশরী বেদন’ কবিতার মর্মার্থ অবিকল এক। দেশভেদে, ভাষাভেদে, রূপভেদ হইয়াছে- এইটুকুই পার্থক্য। …
উৎস: মুসলিম বাংলা সাহিত্য: ড. মুহম্মদ এনামুল হক এ রাধা-কৃষ্ণ বা রাঈ-কানু শব্দ দু’টির ব্যাখ্যা মিলে সিলেটের মরমী কবিদের রচনায় এভাবে:
তন রাধা মন কানু শাহনূরে বুলে।
রাধা কানুর মিলন হৈব আড়াই হাঢের তলে\ …
-সৈয়দ শাহনূর (র.)
তন রাধা মন কানু কেহ নহে ভিন্।
ভাবিয়া চিন্তিয়া কহে ভবানন্দ দীন\ …
-দীনভাবানন্দ
তন রাধা মনকানু ভাইবা দেখ মনে।
রাধা-কানু বিচারিয়া দেখ আপন তনে\ …
পীর মজির উদ্দিন (র.)
টীকা: ভবানন্দ সিলেটী নাগরী লিপিতে রচিত সাহিত্যের কবিনন। তিনি বাংলায় কৃষ্ণ লীলা বিষয়ক ‘হরিবংশ’ নামে একটি কাব্য লিখে ছিলেন। ‘রাগ হরিবংশ’ এক সময় সিলেটে জনপ্রিয় ছিল। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে মোহাম্মদ আফজাল নামে এক ব্যক্তি সিলেটী নাগরী লিপিতে ‘মজমা রাগ হরিবংশ’ নামে তা দুই খন্ডে প্রকাশ করেন। প্রকাশকের কথায় বিষয়টি এসেছে এভাবে:
এগারশ ছাপ্পান্ন আটাশ পউশেতে।
লেখেছিল এক হিন্দু পুথি বাংগেলাতে\
অনেক মেহনতে আমি শে পুঁথি পাইনু।
লেখেছিল যে মতে সে মতে উঠাইনু\ ….
ভবানন্দ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার নামের আগে দীন যোগ করে দীনভবানন্দ নামে পরিচিত হন। শেষ জীবনে তিনি ভারতের ধর্মঘর মহকুমার কাশিম নগরে বসবাস করেন। সেখানে তাঁর মাজার বিদ্যমান।উৎস: সিলহটের ইতিহাস। মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন সাহিত্যরত্ন।
ড. গোলাম কাদির সিলেটী নাগরী লিপি: ভাষাও সাহিত্যের উৎস সন্ধান করতে যেয়ে সিলেটের ঐতিহাসিক পটভূমি, সিলেটের মাটি ও মানুষের প্রকৃতি, সমাজ ও সংস্কৃতি, সিলেটী নাগরী লিপির উদ্ভবের কারণ, বিকাশ ও পরিণতি প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে বিষয়টি দেশ-বিদেশের সুধি মহলের সামনে নিয়ে আসেন।
লেখক সিলেটী নাগরী লিপি, ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে যেয়ে প্রাসঙ্গিকভাবে সিলেটী নাগরী লিপিতে যারা সাহিত্য চর্চা করেছেন তাঁদের মধ্যে সৈয়দ শাহ হোছন আলম (র.), মুহম্মদ খলিল, সৈয়দ শাহ নূর (র.), সূফী শিতালং (র.), মুন্সী ছাদেক আলী (র.), শাহ আরফুম (র.), নদিম আলী (র.), সৈয়দ জহরুল হোসেন (র.), শেখ ভানু (র.) প্রমুখদের প্রসঙ্গেও সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন।এছাড়া মহবত নামা (প্রনয়োউপাখ্যান), হালতুন্নরী (নবীজীবনী), ওয়জিবুল আমল (ধর্ম বিষয়ক), হরফুল খাছলত (সুফীতত্ত্ব), কড়িনামা (সমাজচিত্র) এবং সিলেটী নাগরী লিপিতে যেসব পুথিঁ কিতাব রচিত হয়েছে এর একটি তালিকাও দিয়েছেন। ড. গোলাম কাদিরের দেয়া গ্রন্থগুলোর মধ্যে:
ভেদসার, তালিব হুছন, চন্দ্রমুখী, খাবর নিশান, শহর চরিত, হাসর তরান, ভেদকায়া, আশিকনামা, ছয়ফুলবেদাত, বাহরাম জহুরা, নূর নাজাত, দইখুরার রাগ, নূর নছিয়ত, হাসর তরান, রাগ শিতালং, রদ্দেকুফুর, বসন্তভমরা প্রভূতি ১২০টি পুঁথি পরিচিত।বিংশ শতাব্দিতে সিলেটের মুসলিম সমাজ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় তাঁরা বাংলা পঠন-পাঠনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ফলে নাগরী চর্চায় স্বপাভাবিক নিয়মে ভাটা পড়ে।একদিন ঐতিহাসিক কারণে যে লিপির উদ্ভব হয়েছিল বিশ শতকে এসে ঐতিহাসিক প্রয়োজনেই নাগরী চর্চা ঐতিহ্য হিসেবে বেঁচে আছে। এ ঐতিহ্যের অনুসন্ধানী ড. গোলাম কাদিরের মতো গুণীজনরা অনাগতকাল সিলেটবাসীর কাছে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তথ্য সূত্রঃ জালালাবাদ লোক সাহিত্য পরিষদ, সিলেট পেইজ।
ছবি সংগ্রহঃ সাংবাদিক আল আমিন সালমান।